বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজিরহাটে থানা এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পংকজ নাথকে সংবর্ধনা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার দিনভর এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।সংবর্ধনা উপলক্ষে সেখানকার ৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষনা করা হয়। শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে না পারায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাদের অভিভাবকরা।মঙ্গলবার সকাল ১১টায় কাজিরহাটের লতা ইউনিয়নের একতা ডিগ্রি কলেজ মাঠে চারটি ইউনিয়নের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫শ’ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী মতবিনিময় সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর মধ্যে ৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন শিক্ষক কর্মচারীরা।ওই থানার আওতাধীন ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি কলেজ ও ১১টি মাদ্রাসায় ঈদের ছুটি থাকলেও তাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম খোলা রাখার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শুধু তাই নয়, ওই অনুষ্ঠানের জন্য প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীকে চাঁদাও দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে। অনুষ্ঠানে ফুলের তোড়া ও মানপত্র দিয়ে এমপি পংকজ নাথকে সংবর্ধনা দেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।অনুষ্ঠানে এমপি পংকজের সাথে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান খেরশেদ আলম ভুলু সহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।কাজিরহাট আসলী সস্তোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মতবিনিময় ও সংবর্ধনা সভায় তাদের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। কাজিরহাট ২০১৩ সালে থানায় রূপান্তরিত হওয়ায় এর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি এমপি সংবর্ধনা দেয়া হয়। একই ইস্যুতে শিক্ষকরাও তাকে সংবর্ধনা দেয়। তিনি বলেন, স্কুল খোলা তবে আমরা তো স্কুলে যেতে পারলাম না, কীভাবে ছুটি নেয়া হলো তাও তিনি জানেন না।সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ভুলু বলেন, এমপি সাহেবকে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীরা সংবর্ধনা দিয়েছেন।তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো কিভাবে ছুটি দিয়েছে তা তার জানা নেই। বোধ হয় ঈদ উপলক্ষে ছুটি দিয়েছে। অনুষ্ঠানের সভাপতি কাজিরহাট একতা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদের পরে তো, তাই ক্লাস হয় না। যে কারণে সমস্ত শিক্ষক কর্মচারীরা এমপির সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকরা সংরক্ষিত ছুটি থেকে ছুটি নিয়েছেন। কলেজের অফিস খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও ঈদের আমেজের কারণে তা খোলা রাখা হয়নি। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পুতুল রানী বলেন, এমপির সঙ্গে কর্মসূচি থাকায় চারটি ইউনিয়নের ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় একদিন সংরক্ষিত ছুটি নিয়েছে।এভাবে একযোগে সব স্কুল ছুটি নিয়ে এমপির সঙ্গে মতবিনিময় আইনসিদ্ধ কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপির সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষার উন্নয়ন ও দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন।জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট বরিশালের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মহসিন-উল ইসলাম হাবুল এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি শেষে মঙ্গলবার খোলা ছিল। তাদের কলেজগুলোর অফিস খোলা থাকায় প্রশাসনিক বিভাগের স্টাফদের দায়িত্বপালন বাধ্যতামূলক।তিনি বলেন, এমপিকে সংবর্ধনার নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বঞ্চিত করা ঠিক হয়নি। তিনি প্রশ্ন রাখেন- কাজিরহাটে এমন কী হয়েছে, যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে নীতি বিরোধী কর্মসূচি করতে হবে এমপিকে।এ বিষয় জানতে জানতে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি পংকজ নাথের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।সাইফ আমীন/বিএ
Advertisement