জাতীয়

অ্যাপসে প্রশ্নফাঁস, উত্তর আসতো ক্ষুদ্র ইয়ারপিসে

পরীক্ষা হয় পরীক্ষা কক্ষে। কিন্তু ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার কক্ষ থেকে পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে বাইরে ফাঁস হয়ে যায় প্রশ্নপত্র। এজন্য ব্যবহৃত হয় শরীরে রাবার দিয়ে আটকানো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। আর হলের বাইরে থেকে ডিভাইসের অ্যাপসে আসে প্রশ্নের উত্তর। কৌশলী পরীক্ষার্থী তার কানে লাগানো অতিক্ষুদ্র ইয়ারপিসে উত্তর শুনে হুবহু লেখেন উত্তরপত্রে।

Advertisement

এমনই একটা চক্রের মূলহোতাসহ মোট সাতজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন- মূলহোতা মো. মাহমুদুল হাসান আজাদ (৩৬), মো. নাহিদ(২৫), রাসেল আলী (২৯), রুহুল আমীন (২৫), খালেকুর রহমান টিটু (২৯), আহমেদ জুবায়ের সাইমন (২৬) ও ইব্রাহিম (২৪)।

রাজধানীর লালবাগ ও কাফরুল থানা এলাকায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা অবস্থান করছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৩০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর কাফরুল ও লালবাগ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার বরে। সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এডিসি আশরাফউল্লাহ, সহকারী কমিশনার নাজমুল হক ও পুলিশ সদরের এলআইসি শাখার সহকারী কমিশনার খায়রুল আনাম অভিযানে নের্তৃত্ব দেন।

Advertisement

এ সময় সাতজনের কাছ হতে ১২টি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ১৬টি মাইক্রো হেডফোন, ১৫টি মোবাইল ফোন, ২৫টি সিম কার্ড, রাবারের আর্ম ব্যান্ড ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধানের জন্য ব্যবহৃত ৪টি বই উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জনতা ব্যাংক, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, বিভিন্ন সরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিসিএস পরীক্ষাতেও এমন অভিনব পদ্ধতিতে জালিয়াতি করেছে চক্রটি।

রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, তারা পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্র হতে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন হলের বাইরে নিয়ে আসে। সেই প্রশ্ন এক্সপার্ট গ্রুপ দিয়ে সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া জনতা ব্যাংকের অ্যাসিস্টেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার (এইও) পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হল থেকে সংগ্রহ করে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষাসহ স্কুল-কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নের উত্তর সরবররাহ করতো চক্রটির সদস্যরা।

Advertisement

ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে চক্রটি পরীক্ষার প্রার্থী নির্বাচন, ডিভাইস সরবরাহের প্রক্রিয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং সমাধানের প্রক্রিয়া আলোচনা করে। ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো বিশেষ রাবারের ব্যান্ড দিয়ে শরীরে আটকে রাখতো পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার হলে নির্ধারিত প্রার্থীর উত্তর ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরবরাহ করে তারা।

সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এডিসি আশরাফউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, চাকরির ধরন বুঝে আগ্রহীদের কাছ থেকে নিতো ৫ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত। এজন্য জামানত হিসেবে পরীক্ষার্থীর মূল সার্টিফিকেট জমা রাখতো প্রতারক চক্রটি। চক্রটির মূলহোতা মাহমুদুল হাসান আজাদ ৩৬ তম বিসিএসের মাধ্যমে অডিটে (নন-ক্যাডার) চাকরি পায়।

তিনি আরও বলেন, কাফরুল থানায় দায়ের করা মামলায় রোববার (১ ডিসেম্বর) ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। পরে সাতজনের প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

জেইউ/এমএসএইচ