দেশজুড়ে

পিয়নের চাকরিতেই তিন বাড়ির মালিক, করেছেন তিন বিয়েও

অফিসের ‘কোটি টাকার ঘাপলা’ জনসম্মুখে আসার পর ‘নিখোঁজ’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন ইয়াছিন মিয়া। সামান্য পিয়ন পদে চাকরি করেই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। জেলা শহরে রয়েছে তার তিনটি বাড়ি, সঙ্গে তিন স্ত্রীও। তার ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনা এখন টক অব দ্য টাউন।

Advertisement

ইয়াছিন মিয়ার বাড়ি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি ইউনিয়নের আতুয়াকান্দি এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মোহন মিয়ার ছেলে। পোস্টিং নাসিরনগর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। তবে বর্তমানে ডেপুটেশনে সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত।

তিনটি ফ্ল্যাট-বাড়িসহ নামে বেনামে রয়েছে আরও অনেক সম্পত্তি। বিয়ে করেছেন তিনটি। সংসারও করেন সব স্ত্রীর সঙ্গেই। পিয়ন হয়ে কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন তা নিয়ে এখন প্রশ্ন সবার মনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২৩ বছর আগে ইয়াছিন সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে পিয়ন পদে চাকরি পান। এরপর নানা সময়ে তাকে আশুগঞ্জ ও নাসিরনগর উপজেলায় বদলি করা হলেও ঘুরে ফিরে তিনি সদর উপজেলায়ই চাকরি করেন। প্রায় সময়ই অফিসের নকল, তল্লাশি ও রেজিস্ট্রেশন ফিসহ চালানের টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে পাঠানো হতো তাকে। কিছুদিন আগে অফিসিয়াল অডিটে তার বিরুদ্ধে ‘কোটি টাকার ঘাপলা’ প্রকাশ পায়। এরপর গাঢাকা দেন ইয়াছিন। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকের ভুয়া চালান তৈরি করে তিনি ওই টাকা আত্মসাৎ করেন।

Advertisement

এদিকে ইয়াছিনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার।

প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে ইয়াছিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এর দুই বছর পর তিনি (ইয়াছিন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে পিয়ন পদে চাকরি নেন। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘরে চার শতাংশ জায়গার ওপর সাজেদাকে একটি তিনতলা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। কয়েক মাস আগে বড় ছেলেকে পাঠিয়েছেন ফ্রান্সে।

জানা গেছে, সাজেদাকে বিয়ে করার ১০ বছর পর আকলিমা নামে এক বিধবাকে মেয়েসহ বিয়ে করেন ইয়াছিন। ওই মেয়ে বড় হওয়ার পর তাকে এক ইতালি প্রবাসীর কাছে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই মেয়ের স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে জেলা শহরের পাইকপাড়ায় একটি ছয়তলা বাড়ি করেছেন।

আকলিমাকে বিয়ের পাঁচ বছর পর আরেক প্রবাসীর স্ত্রী মকসুরা বেগমের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে তাকেও বিয়ে করেন। মকসুরাকে নিয়ে শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকায় নিজের কেনা একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন ইয়াছিন। সম্প্রতি অফিসের কোটি টাকা আত্মসাৎসহ দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশের পর মকসুরাকে নিয়েই গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

এদিকে গা ঢাকা দেয়ায় এ বিষয়ে জানতে ইয়াছিনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বাবা মোহন মিয়া জানান, ‘ইয়াছিনের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। সে তিনটি বিয়ে করেছে বলে জানি। এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না’।

অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাব- রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পুরো ঘটনা উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আইজিআরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

আজিজুল সঞ্চয়/এমএমজেড/এমকেএইচ