জাতীয়

বিআরটিএ প্রশিক্ষণ পেল লক্ষাধিক চালক

সুষ্ঠু সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা ও সড়ক নিরাপত্তায় ১৯৮৩ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (সংশোধিত ১৯৮৭) এর ধারায় গঠিত বিআরটিএ কার্যক্রম শুরু করে ১৯৮৮ সালে। প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোড সেফটি।

Advertisement

২০১১-২০ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ এর অনুসমর্থনকারী হিসাবে গোল (GOAL)- ৩.৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ লক্ষ্যে বিআরটিএ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংস্থাটি চলতি বছর দক্ষ চালক তৈরির জন্য এক লাখ দুই হাজার ১৭৯ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের গণসচতেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ প্রচারাভিযান চালাচ্ছে বিআরটিএ। বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর এবং পাস হবার আগে থেকেই ‘নতুন নিরাপদ সড়ক আইন’ সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয় বিআরটিএ।

বিআরটিএ’র রোড সেফটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ রাজধানী ও সারাদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সড়ক নিরাপত্তা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক শ্লোগান-সম্বলিত স্টিকার, লিফলেট ও পোস্টার গাড়িচালক, যাত্রী, পথচারী ও সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিয়মিতভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। এর অনেক কার্যক্রমে খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীও উপস্থিত থেকে প্রচারণা উদ্বুদ্ধ করেন।

Advertisement

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সড়ক নিরাপত্তা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক শ্লোগান-সম্বলিত বিভিন্ন প্রকার ১০ লাখ এক হাজার ৮৪২টি লিফলেট ও চার লাখ ৬৭ হাজার ৩৫৩টি স্টিকার বিতরণ করা হয়। বাকি সময় তা অব্যাহত থাকবে।

বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক, মোটরযান পরিদর্শক ও সহকারী মোটরযান পরিদর্শকগণকে ‘সড়ক নিরাপত্তাকল্পে দুর্ঘটনা কবলিত মোটরযান পরিদর্শন এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান পদ্ধতি’ শীর্ষক ওয়ার্কসপ আয়োজনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান সংক্রান্ত ওয়ার্কসপ সভা, সমাবেশ, সেমিনার, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভাগীয় ও জেলা শহরে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে বিআরটিএ’র উদ্যোগে রোড-শো, র‌্যালি, সভা-সমাবেশ ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সড়ক নিরাপত্তা ও গণসচেতনতায় বিআরটিএ কর্তৃক বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় নিয়মিতভাবে সড়ক নিরাপত্তা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বক্তব্য/বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরসহ বিগত ১০ বছরের তথ্যাদি

Advertisement

সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির জন্য শ্রেণি ও বয়স ভিত্তিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাকি কার্যক্রম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। সড়ক দুর্ঘটনারোধে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর অবস্থিত হাট-বাজার ও বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণের জন্য সকল জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মহাসড়কে বাসের গতিসীমা ৮০ কি.মি. এবং ট্রাকের গতিসীমা ৬০ কি.মি. বেধে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি ব্যাপক প্রচার করা হয়েছে।

সড়ক নিরাপত্তায় ১১১ দফা সুপারিশ প্রণয়ন

জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভায় সড়ক পরিবহন সেক্টরের শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে সভাপতি করে ১৫ (পনের) সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কর্তৃক ১১১টি সুপারিশমালা প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর গত ২৮ এপ্রিল দাখিল করা হয়।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন

জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সরকার ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। ‘আইন মেনে চলব, নিরাপদ সড়ক গড়ব’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গত ২০১৮ সালে ২২ অক্টোবর সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস- ২০১৮ উদযাপন করা হয়।

প্রশিক্ষণ

বিআরটিএ’র সদর কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ শাখা কর্তৃক সদর কার্যালয়ে তথ্য আইন, সরকারি চাকুরীর বিধিমালা, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়া কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিভিন্ন সরকারি ও অন্যান্য ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা্র গ্রহণ করেছে বিআরটিএ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়া সকল উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ)-কে একই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বিভাগের কর্মরত সার্কেলসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

পেশাজীবী গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ

২০০৮ সাল থেকে পেশাজীবী গাড়িচালকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে বিআরটিএ। এ প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১৬ সাল থেকে পেশাজীবী গাড়িচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নকালে এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্য̈তামূলক করা হয়।

এছাড়া আমন্ত্রণের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০টি সেশনে বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হতে প্রায় ৪০০ গাড়িচালক এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছয়টি সেশনে ২০০ গাড়িচালককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়া বিআরটিএ কর্তৃক ইস্যুকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, রুটপারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট ইত্যাদি কাগজপত্রাদির সঠিকতা যাচাই কৌশল, সরেজমিন ইস্যুর পদ্ধতি এবং মোটরযান আইন ও বিধি সম্পর্কে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের বিআরটিএ থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালে ২০০ জন ট্রাফিক পুলিশ এবং ২০১৯ সালে ২৫০ ট্রাফিক পুলিশকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মো. মাহবুব-ই-রব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোয় সফলতাও এসেছে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ (প্রায় ৯৫ শতাংশ) মোটরসাইকেল আরোহী ও যাত্রী হেলমেট ব্যবহার করছেন।

জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার নিয়ন্ত্রণসহ নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইকের মতো অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে বিআরটিএ নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের কারণে আইন প্রয়োগকারী ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের মধ্যে দক্ষতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে, আগামী বছরের মধ্যে আরও এক লাখ ৩০ হাজার দক্ষ চালক তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো।

জেইউ/এমএআর/এমএস