জাতীয়

বন্ধ হয়ে গেল অর্ধশতাব্দির পুরোনো চানখারপুলের পেট্রলপাম্প

রাজধানীর চাঁনখারপুলে অবস্থিত অর্ধশতাব্দির পুরোনো পেট্রলপাম্পটি অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল। ঐতিহ্যবাহী এই পাম্পটি বন্ধ করে মঙ্গলবার সকাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃপক্ষ সেখানে আন্তর্জাতিক মানের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের (ঢাকা সিটি ডিভিশনের) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুরশীদ জাগো নিউজকে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে সীমানা প্রাচীর তৈরির অংশ হিসেবে তারা পেট্রলপাম্পটির চারপাশে দেয়াল তোলার কাজ শুরু করেছেন। মোট ১ দশমিক ৭৬ একর জমির ওপর নির্মিত হবে আন্তর্জাতিকমানের এ বার্ন ইনস্টিটিউট। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, পুলিশের উপস্থিতিতে পেট্রলপাম্পের চারপাশে গর্ত করে ইটের দেয়াল তোলা হচ্ছে। পেট্রলপাম্পে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেল নিতে এসে ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন। পেট্রলপাম্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হতবিহবল হয়ে ভেতরে-বাইরে বসে আছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে এটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এখানে বার্ন ইনস্টিটিউট নির্মাণের কথা জানতে পারেন। তারা যোগাযোগ করে জানতে পারেন এখানে বার্ন ইনস্টিটিউট তৈরি হলেও আপাতত পেট্রলপাম্পের জায়গাতে কিছুই করা হবে না। তিনি জানান, মাত্র কয়েকদিন আগে তারা ১০ হাজার লিটার অকটেন তুলেছেন। পেট্রলপাম্পটির ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪০ হাজার লিটার। হঠাৎ করে পেট্রলপাম্পটি বন্ধ হওয়ায় তারা ব্যবসায়িকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ  হবেন।পুরান ঢাকার চাঁনখারপুলে বর্তমানে যে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে সেখানকার দুই একর জমির ওপর বহুতল ভবন বিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।বার্ন বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্লাস্টিক সার্জনদের বার্ষিক সম্মেলনে এসে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন।এরপর গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মো. জুলফিকার আলী বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল গত ২ আগস্ট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে আসেন।ওই প্রতিনিধিদলে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব বদরুন নেসা, উপ-সচিব নাসরিন মুক্তি, ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকার, স্থাপত্য বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি আলপনা চাকমা, উপ-প্রধান স্থপতি মঞ্জুরুর রহমান, সহকারী প্রধান স্থপতি এ কে এম মাসুদ পারভেজ ও আনিসুর রহমান।ডা. সামন্তলাল সেন জাগো নিউজকে বলেন,  দেশে প্রতি বছর গড়ে ৬ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্নভাবে (বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, অগ্নিশিখা, রাসায়নিক ও গরম তরল পদার্থে) দগ্ধ হচ্ছেন। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে উচ্চ ডিগ্রিধারী বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। তিনি বলেন, সারাদেশের হাজার হাজার পোড়া রোগীর চিকিৎসার জন্য (এমডি ও এম.এস উচ্চ ডিগ্রিধারী) কমপক্ষে ১ হাজার ৫শ’ জন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫২ জন।বর্তমানে সীমিত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত মেডিকেল কলেজে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এমএস ও মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস)-এ এফসিপিএস কোর্সে প্রতি বছর হাতেগোনা ২ থেকে ৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে।পৃথক ইনস্টিটিউট স্থাপিত হলে প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১২ জন উচ্চ শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।এমইউ/একে/পিআর

Advertisement