দেশজুড়ে

ভাঙলো ওয়ার্কার্স পার্টি, নতুন দলের সভাপতি নুরুল সা.সম্পাদক জাহিদ

আদর্শগত বিরোধের জেরে অবশেষে ভেঙে গেল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। পার্টির ১০ম কংগ্রেস বর্জন করা নেতারা ২৯-৩০ নভেম্বর যশোরে ‘বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির’ মতাদর্শ রক্ষা সমন্বয় কমিটির ব্যানারে জাতীয় সম্মেলন করে ১১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Advertisement

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) নামে এ দলের সভাপতি নুরুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ইকবাল কবির জাহিদ। তারা রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরো সদস্য ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ২২ অক্টোবর পার্টির মূল নেতৃত্বের বিচ্যুতির কারণ দেখিয়ে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন ওয়ার্কার্স পাটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস। এ ঘটনার চারদিন পর ২৬ অক্টোবর পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে তাকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর ২৮ অক্টোবর ১০ম কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় আরও ছয় নেতা। তারা হলেন- পলিটব্যুরো সদস্য নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাকির হোসেন হবি, মোফাজ্জেল হোসেন মঞ্জু, অনিল বিশ্বাস ও তুষার কান্তি দাস। এর আগে গত ২-৩ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয় রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির ১০ম কংগ্রেস। ওই কংগ্রেসে মেনন সভাপতি ও ফজলে হোসেন বাদশা দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন।

Advertisement

ওয়ার্কার্স পার্টির নতুন অংশের নেতারা বলছেন, ২০ বছর আগে থেকেই পার্টির ভেতরে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় নিয়ে নেতাকর্মীদের অবস্থান তৈরি হয়েছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মন্ত্রিত্ব, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়ে নাম আসা, বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাম আসা, সর্বশেষ ক্যাসিনো কারবারিদের সঙ্গে রাশেদ খান মেননের নাম আসার পর দলের ভেতরে বিরোধিতা প্রকাশ্যে আসে। একই সঙ্গে একটি গ্রুপ এ বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মেননের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা বিউটিকে মনোনয়ন দেয়ায় পার্টির একটি অংশ তা মেনে নিতে পারেনি। এসব বিবেচনা করেই দলের নেতৃত্ব মানতে অস্বীকার করেছে একটি অংশ। ১৯৯২ সালে গঠিত হওয়ার পর ওয়ার্কার্স পার্টি এ নিয়ে তৃতীয় দফায় ভাঙলো। এর আগে ১৯৯২ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি, ইউনাইডেট কমিউনিস্ট লীগ ও সাম্যবাদী দল (আলী আব্বাস) এ তিনটি দল নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

১৯৯৫ সালে পলিটব্যুরোর সদস্য টিপু বিশ্বাস বেরিয়ে নতুন দল করেন গণফ্রন্ট। ২০০৪ সালের ১৪ জুন বেরিয়ে পলিটব্যুরোর আরেক সদস্য সাইফুল হক, বর্তমানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাশেদ খান মেননের অংশটির পক্ষ থেকে অবশ্য নতুন সম্মেলন করার বিষয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে দলটির পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ওয়ার্কার্স পার্টির নাম ব্যবহার করে কথিত জাতীয় সম্মেলন অবৈধ। রাশেদ খান মেননের নেতৃত্ব অস্বীকার করে নতুন অংশের উদ্বোধনী সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন ঢাকার কয়েকটি বাম দলের শীর্ষ নেতারা।

Advertisement

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য লিয়াকত আলী। খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানের ভাই নুরুল হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে সম্মেলনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন ‘মতাদর্শ রক্ষা সমন্বয় কমিটি’র সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ। বক্তব্য রাখেন বিমল বিশ্বাস, মনোজ সাহা প্রমুখ।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) নামে গঠিত নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির বলেন, ২০২০ সালে উপমহাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। এ সময় আমরা দেশের বহুধাবিভক্ত পার্টিগুলোর ঐক্য চাই। লক্ষ্য যখন এক, তখন এক পতাকাতলে আসার সব বাধা আমরা অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে গণআন্দোলনের মাধ্যমে ঐক্য অর্জন করবোই। এ সম্মেলনে আমরা সেই প্রত্যয় ঘোষণা করছি।

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ সম্মেলনকে ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে ঐক্যের ধারাকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। বাম নেতা সাইফুল হক বলেন, ২০১৪ সালে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালে তা চূড়ান্তভাবে দেশবাসী দেখেছে।

যশোরের বাম দলগুলোর নেতারা জানান, ওয়ার্কার্স পার্টির নতুন অংশের সম্মেলনে ঢাকার নেতাদের অংশগ্রহণকে স্থানীয়ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী দিনে বামধারার রাজনীতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে ঢাকার বাম নেতাদের উপস্থিতি এতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন।

মিলন রহমান/এমএএস/জেআইএম