দেশজুড়ে

সেই পুনর্বাসন কেন্দ্র সিলগালা, ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কুষ্টিয়ার মিরপুরে মানসিক ভারসাম্যহীন কলেজছাত্র কামরুজ্জামান হত্যার ঘটনায় ‘সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের’ মালিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে নিহতের চাচা স্বপন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

Advertisement

এর আগে বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে মিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুল হাসানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান শেষে মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি সিলগালা করে দেয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল মতিন ও তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উদ্দিনকে আটক করা হয়।

জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর কলেজছাত্র কামরুজ্জামান ইমনকে মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার সমর্পণ মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা। ২০ নভেম্বর ওই কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমনকে মিরপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ২৬ নভেম্বর সিসি টিভির ফুটেজ কলেজছাত্র হত্যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।

মাদকসক্তি নিরাময় কেন্দ্রর কর্মকর্তাদের দাবি- হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তবে সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে- ওই ছাত্রকে পিটিয়ে ইনজেকশন পুশ করা হচ্ছে

Advertisement

নিহত ইমন উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুর গ্রামের এজাজুল আজিম রিপনের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল।

স্থানীয়রা জানান, ইমনের শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। তবে ইমনকে যে নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিসি টিভির ফুটেজ দেখে। ক্যামেরায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত পা বেঁধে মারধর করছে, শরীরের পুশ করা হচ্ছে ইনজেকশন। এ ঘটনার পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। যার কারণে ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুল হাসান জানান, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। মালিকপক্ষ প্রয়োজনীয় লাইসেন্স দেখিয়েছে। যেহেতু এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাই প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠান মালিকসহ আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ৯ রোগীর মধ্যে পাঁচজনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিনজনকে কুষ্টিয়ার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আজিজুল হক জানান, ‘সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের’ বিভিন্ন অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়াও ইমন হত্যার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। আরও তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Advertisement

ইমনের কয়েকজন বন্ধু বলেন, কোনো নেশার সঙ্গে জড়িত ছিল না ইমন। আমরা কখনই নেশা করতে দেখিনি। মৃত্যুর প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল ইমন। প্রথম দিকে না বুঝলেও কয়েকদিন পর বিষয়টি বুঝতে পারে ইমনের পরিবার। তারপর ইমনের বাবা ইমনকে ডাক্তারও দেখিয়েছিলেন। ডাক্তার বলেছিলেন অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ঘুম কম হওয়ায় এমন সমস্যা হয়েছে। কয়েকদিন বিশ্রাম করলেই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।

আল-মামুন সাগর/আরএআর/পিআর