ছোট্ট একটি বিশ্রামকক্ষ। কক্ষের বিবর্ণ দেয়ালের কোথাও কোথাও ফাটল ধরেছে। ছোট্ট কক্ষটির বিছানার ওপর পড়ে আছে তিনটি বিশাল সাইজের রঙিন বাঁশি, একটি হেডফোন ও একটি রেজিস্টার্ড খাতা। পাশেই দেয়ালে ঝুলছে সুতায় বাঁধা আরও দুটি বড় সাইজের বাঁশি, দেয়ালের নিচে রাখা মিটসেফের ওপরও দুটি বাঁশি পড়ে আছে।
Advertisement
কক্ষটির ছোট্ট একটি টেবিলে রয়েছে প্যাকেট বিস্কুট ও মুড়ির ডিব্বা, সরিষার তেলের বোতল আর বাতাস দিয়ে ফোলানো একটি বালিশ। টেবিলের ওপর একটি দেয়ালে একটি কম দামি প্লাস্টিকের ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট।
বিশ্রামকক্ষটি রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি)। পেশাগত প্রয়োজনে বলতে গেলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় ওসিদের। তাই যখনই একটু সময় পান তখনই কক্ষে শুয়ে একটু বিশ্রাম নেন।
থানার ওসি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। থানার ওসি মানেই মোটাসোটা রাগি চেহারা। কথায় কথায় অধস্তন কর্মকর্তাদের ধমক দেবেন; কোমড়ে পিস্তল ও মোটা লাঠি হাতে ছড়ি ঘুরাবেন। আসামিদের কাছ থেকে কথা আদায়ে সমানে পেটাবেন; তার ভয়ে তটস্থ থাকবে থানা। এ রকম ধারণা এখনও সাধারণ মানুষের মাঝে বিদ্যমান।
Advertisement
কিন্তু ব্যতিক্রম পুলিশ কর্মকর্তাদের একজনের দেখা মেলে রাজধানীর লালবাগ থানায়। এ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আশরাফউদ্দিন। তিনি একজন ‘সংগীতপ্রেমী’ ওসি। পেশাগত কাজের বাইরে ঘুমানোর সময়টুকু ছাড়া বাকি যে টুকু সময় পান, সেই অবসরে বাঁশিতে গানের সুর তোলেন। তাই তার বিশ্রামকক্ষ জুড়েই বাঁশি আর বাঁশি। বাঁশি কেনা ও সংগ্রহের পাশাপাশি নিজেও স্টিলের পাইপের সাহায্যে বাঁশি তৈরি করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে পেশাগত কাজে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বিশ্রাম কক্ষে যান। আলাপচারিতার একপর্যায়ে জানান, তিনি বাঁশি বাজাতে ভালোবাসেন। তবলাও বাজান বেশ ভালো। এ প্রতিবেদক অনুরোধ করতে বাঁশিতে সুর তোলেন তিনি।
আশরাফউদ্দিন জানান, দোহার নবাবগঞ্জের সন্তান তিনি। তার মরহুম বাবা একজন সংগীতপ্রেমী ছিলেন। তিন ছেলেমেয়েকে সংগীত, তবলা ও বাঁশি বাজানো শিখিয়েছেন।
আশরাফউদ্দিন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য। তিনি মূলত তবলার ওপর প্রশিক্ষিত হলেও পরে বাঁশির প্রতি ভালোবাসা জন্মায়।
Advertisement
তিনি জানান, ঢাকা কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৮ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। একসময় নিয়মিত বাঁশি বাজালেও পেশাগত কাজের অতিরিক্ত ব্যস্ততার কারণে বাঁশি বাজানো ছেড়ে দেন।
২০১৫ সালে একুশের বইমেলায় বড় বাঁশি দেখে বাঁশি বাজানোর পাগলামি ফের শুরু হয়। মেলা থেকে বাঁশি কিনে এনে আবার বাজানোর চর্চা শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন বাঁশি সংগ্রহ করেন। সময় পেলেই বাঁশি বাজান। থানার সবাই তাদের স্যারের ‘বাঁশিপ্রেমের’ কথা জানেন।
বাঁশি বাজিয়ে শোনানোর পর ওসি বলেন, তিনি ব্যক্তি প্রচার-প্রচারণায় বিশ্বাসী নন। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। মাঝে বেশ কয়েক বছর বাঁশি ভুলে থাকতে পারলেও এখন পারেন না। নিয়মিত সময় বের করে বাঁশি বাজিয়ে চর্চা ঠিক রাখেন।
এমইউ/এসআর/পিআর