পুলিশ হেফাজতে থেকে আদালতে এসে ‘আইএস’ লেখা টুপি পরা জঙ্গি ‘বিশেষ বার্তা’ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কূটনীতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিদুজ্জামান।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘এমন লেখা ধারণ করে জঙ্গিরা তাদের সাহস এবং আদর্শের বার্তা তুলে ধরেছে। আরবি ভাষায় লেখা এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশ প্রশাসন হয়তো খেয়াল করতে পারেনি। এ নিয়ে আমিও উদ্বেগ প্রকাশ করছি না। উদ্বেগ প্রকাশ করছি, এই তরুণরা কী করে এমন পথে গেল এবং তাদের মৃত্যুদণ্ডের খবরে।’
হলি আটিসান হত্যাকাণ্ডের রায়, আইএস লেখা টুপি পরে আসামির আদালতে হাজিরা দেয়া এবং জঙ্গিবাদ-বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় এই নিরাপত্তা বিশ্লেষকের কাছে।
তিনি বলেন, “আদালতে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি এবং ‘আইএস’ লেখা টুপি নিয়ে বিচলিত না হয়ে মূল আলোচনায় সবার অংশ নেয়া উচিত। এই তরুণরা ভয়ঙ্কর পথে কেন আসছে, সেই প্রশ্ন তোলা উচিত। জঙ্গিরা আদালতে এসে বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে যে বার্তা দিয়েছে, তাই নিয়ে আলোচনা করার সময় এসেছে।”
Advertisement
‘অপেক্ষাকৃত গরিব মানুষেরা এ পথে আসছে। যারা সমাজে নানাভাবে বৈষ্যমের শিকার। মাদরাসায় পড়েও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের চেহারায় কোনো অপরাধের ছাপ নেই। বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়ে তারা এই অন্ধকার জগতে। এই বাস্তবতা রাষ্ট্র, সমাজকে বুঝতে হবে’, বলেন অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এই অধ্যাপক বলেন, ‘খুবই কষ্ট লাগে জঙ্গিদের হাতে যখন নীরহ মানুষকে মরতে দেখি। আবার জঙ্গিদের মৃত্যুদণ্ডের খবরেও আমি বড় কষ্ট পাই। জঙ্গিদের টাকা-পয়সার লোভ-লালসা নেই। তারা মরতেও পরোয়া করে না। অথচ, ভুল পথে তারা নিজেদের জীবনকে অভিশপ্ত করে তুলেছেন। তাদেরকে কোনোভাবেই আপনি অন্য অপরাধীর সঙ্গে তুলনা করতে পারবেন না। সম্পূর্ণ আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। মূল কারণে ফিরতে হবে আপনাকে।’
জঙ্গিবাদের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মৃত্যুদণ্ডই আসল সমাধান নয়। এত মৃত্যৃদণ্ড, আটকের ঘটনাও ‘বিশেষ অ্যালার্মিং’ বলে আমি মনে করি। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পরে তো আর জেলখানায় জায়গা থাকবে না। জঙ্গিরা মারছে, তাদের আবার ফাঁসি দেয়া হচ্ছে, ক্রসফায়ারে মরছে। এত মৃত্যু একটি সমাজের জন্য কোনোভাবেই শুভবার্তা বয়ে আনে না। এতে কেবল হিংসা প্রতিহিংসা ছড়ায়। আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের চিত্র বাংলাদেশেও দেখতে পাচ্ছি। আমরা শাস্তির ব্যাপারে বেশি সোচ্চার কিন্তু শোধরানোর ব্যাপারে আলোচনা করছি না।”
তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ইসলাম সমর্থন করে না, এটি বোঝানোর দায়িত্ব সমাজ, রাষ্ট্রের, ধর্মীয় ব্যক্তিদের। অথচ, সেদিকে আমরা সফল হতে পারিনি। কেন তরুণরা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে, তা পুলিশ প্রশাসনই পরিষ্কার করে বলতে পারবে। তাদের কাছে প্রচুর তথ্য এতদিনে সংগ্রহে থাকার কথা। আমরা সমস্যার মূলে যেতে না পারলে কোনোদিনই ভালো থাকতে পারব না।’
Advertisement
হলি আর্টিসান মামলার রায়ের সব খবর পড়ুন এক ক্লিকে
এএসএস/এসআর/এমএস