আইন-আদালত

যে কারণে খালাস পেলেন বড় মিজান

বহুল আলোচিত রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আট আসামির মধ্যে ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে হামলায় তার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয়া হয়েছে।

Advertisement

বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৭ আসামি হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, মো. হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপন।রায় শুনে তাদের কারও চেহারাতেই অনুশোচনার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। তাদের একজন উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‌‌‘আল্লাহু আকবর, আমরা কোনো অন্যায় করিনি।’

অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা আরেক আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয়া হয়েছে রায়ে। তাকে রায় শুনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।আদালত রায়ে উল্লেখ করেন, ‘উপরোক্ত আলোচনা ও সাক্ষ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬ (২) (অ) ধারার অভিযোগ এবং আসামি মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৯ এর ৬ (২) (উ) ধারার অভিযোগ, আসামি জাহাঙ্গির হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুস সবুর খান ও শরিফুল ইসলাম খালেদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৭ ধারায় অভিযোগ, আসামি জাহাঙ্গির হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৮/৯ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং সেজন্য উক্ত আসামিগণকে উক্ত ধারাগুলোর অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত করে সাজা প্রদান করা যেতে পারে।

Advertisement

আসামি মামুনুর রশীদ রিপনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৭ ধারার অভিযোগ, মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬ (২) (অ)/৭/৮/৯/১০/১১/১২/১৩ ধারার অভিযোগ এবং আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, মো. হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশীদ রিপনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ১০/১১/১২/১৩ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি এবং সেজন্য এই আসামিগণ উক্ত ধারার অভিযোগ হতে খালাস পেতে পারে।

এর আগে, ২০১৮ সালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই দিন রাত পৌনে ৯টার দিকে সশস্ত্র পাঁচ জঙ্গি বেকারিতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে ২২ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে যার মধ্যে ৯ জন ইতালিয়ান, সাত জন জাপানি, এক জন ভারতীয় নাগরিক। জঙ্গিদের দমনে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। জঙ্গিরা বেকারিতে যাওয়া অতিথিদের রাতভর জিম্মি করে রাখে। পরদিন সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সেনাবাহিনী কমান্ডো অভিযান- অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনা করে তাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি করে। অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও একজন বেকারি শেফ নিহত হন। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত হন আরও একজন বেকারিকর্মী।

হলি আর্টিসান মামলার রায়ের সব খবর পড়ুন এক ক্লিকে

Advertisement

জেএ/জেএইচ/এমকেএইচ