ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর ভিওসি ঘাটে বসা ধানের হাটকে বলা হয়ে থাকে পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মোকাম। প্রতিদিন এই মোকামে প্রায় এক লাখ মণ ধান বেচা-কেনা হয়ে থাকে। মোকামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এসব ধান ক্রয় করেন চাতাল কল মালিকরা।
Advertisement
তবে গত এক সপ্তাহ ধরে মোকামে ধানের বেচা-কেনা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এর কারণ হিসেবে চালের দাম না বাড়ার কথা জনিয়েছেন চাতাল কল মালিকরা। এতে করে লোকসান গুণতে হচ্ছে ধান ব্যবসয়ীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান কৃষক ও ব্যবসায়ীরা নৌপথে আশুগঞ্জ মোকামে নিয়ে আসেন। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ধান বেচা-কেনা। আশুগঞ্জের আড়াইশ চাতাল কলের ধানের যোগান দেয় এই মোকাম। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান থাকলেও দাম কম হওয়ায় বেচা-কেনার হার কমেছে। আগে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মণ ধান বেচা-কেনা হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার মণ ধান বেচা-কেনা হচ্ছে মোকামে।
বর্তমানে আশুগঞ্জ মোকামে প্রতি মণ বিআর-২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা ও বিআর-২৯ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৬০ টাকায়। আর বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিআর-২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬৫০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা ও বিআর-২৯ চাল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫৮০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। তবে মোকামে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে ব্যবসায়ীরা এর বেশি দাম দিয়ে ধান ক্রয় করার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু চাতাল কল মালিকদের চাহিদা কম থাকায় বাধ্য হয়েই লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
Advertisement
আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের ধান ব্যবসায়ী উজ্জল খান জানান, ২০ বছর ধরে তিনি ধান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন জায়গা থেকে ধান কিনে এনে আশুগঞ্জ মোকামে বিক্রি করেন। মোকামে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে ধানের দাম কম। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার পর মোকাম পর্যন্ত নিয়ে আসতে যে খরচ হয়েছে তার চয়ে কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। কারণ চালের দাম না বাড়ায় ধানের চাহিদা কম।
সরাইল উপজেলার বিটঘর গ্রামের আরেক ধান ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়া জানান, কৃষকদের কাছ থেকে আমি বিআর-২৮ ধান ৯০০ টাকা মণ এবং বিআর-২৯ ধান ৮০০ টাকা মণ কিনেছি। এর সাথে আরও অনেক খরচ আছে। কিন্তু মোকামে এনে বিআর-২৮ বিক্রি করতে হয়েছে ৮০০ টাকা ও বিআর-২৯ বিক্রি করতে হয়েছে ৭৬০ টাকায়। এক হাজার মণ ধান বিক্রি করে আমার ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে।
আরেক ধান ব্যবসায়ী ও চাতাল কল মালিক শাকিল আহমেদ জানান, ধানের বাজারের সঙ্গে চালের বাজারের কোনো মিল নেই। মোকাম থেকে ধান কেনার পর পরিবহন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য একজন চাতাল কল মালিকের যে টাকা খরচ হয়, সে অনুযায়ী চালের দাম পাওয়া যায় না। মাঝখানে চালের দাম কেজিতে দুই-চার টাকা বেড়েছিল। কিন্তু মিডিয়ায় লেখালেখির কারণে আবার দাম কমে গেছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে। কৃষকরা ধান চাষ পারবে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা বসে গেলে ধান কিনবে কে?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা চাতাল কল মালিক সমিতির সভাপতি মো. জোবায়ের হায়দার বুলু বলেন, এক সপ্তাহ আগেও ধানের দাম ভালো ছিল। কিন্তু ধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চালের দাম বাড়েনি। এর ফলে ধানের দাম এখন নিম্নমুখী। অনেক চাতাল কলেই আগের চাল রয়েছে। চালের দাম না বাড়ায় বিক্রি করতে গেলে লোকসান হবে।
Advertisement
আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর/এমকেএইচ