চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের জেলা পরিষদ নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীরা নজিরবিহীন জয় পেয়েছে। গত কয়েক মাসের টানা চীনা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর রোববার স্থানীয় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
Advertisement
প্রাথমিক ফলাফলে চীনপন্থী প্রার্থীরা গণতন্ত্রপন্থীদের কাছে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে। কয়েক মাসের বিশৃঙ্খলার কারণে রোববারের এ ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত কিংবা বাতিল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকলেও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিবিসি বলছে, গত কয়েক মাসের বিশৃঙ্খলা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের পর এই নির্বাচনকে সরকারের সমর্থনের পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। সরকার এবং বেইজিং আশা করেছিল, এ নির্বাচন তথাকথিত নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমর্থন তুলে ধরবে। কিন্তু বাস্তবে আসলে তেমনটা ঘটেনি।
এমনকি পরিষদের বেশকিছু আসনে বেইজিংপন্থী হেভিওয়েট প্রার্থীরাও গণতন্ত্রকামীদের কাছে হেরে গেছেন। বেইজিংপন্থি বিতর্কিত সংসদ সদস্য জুনিয়াস হো তার নিজের আসনে হেরে যাওয়ার পর বলেন, ‘স্বর্গ এবং নরক’ তছনছ হয়ে গেছে।
Advertisement
এই ভোট কেন গুরুত্বপূর্ণ?
হংকংয়ের জেলা পরিষদের কাউন্সিলরদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা খুবই সীমিত। এই কাউন্সিলররা সাধারণত বাস রুট, ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করার মতো স্থানীয় কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায় না।
কিন্তু প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থীরা হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের বিপক্ষে তাদের ভোটপ্রদান করলেন। হংকংয়ের বিতর্কিত বন্দি প্রত্যর্পণ বিলের বিরোধিতা করে কয়েক মাস ধরে টানা বিক্ষোভ-সহিংসতা করে আসছেন গণতন্ত্রপন্থিরা। স্থানীয় পার্লামেন্টে বিশেষ এই আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর চীনা বিরোধীরা তুমুল আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত এই বিল প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন ক্যারি লাম।
এবারের এই নির্বাচনের আগে হংকংয়ের প্রায় ৪১ লাখ ভোটার নিবন্ধন করেছিলেন। যা চীনের বিশেষ এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। প্রায় ২৯ লাখ মানুষ রোববারের নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ২০১৫ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৭ শতাংশ ভোট পড়লেও এবার পড়েছে ৭১ শতাংশের বেশি।
Advertisement
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী নির্বাচনে ১২০০ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এখন জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী অন্তত ১১৭ জন কাউন্সিলর এই কমিটিতে জায়গা পাবেন। গণতন্ত্রপন্থিরা ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় এবার তারাই ঠিক করতে পারবেন হংকংয়ের পরবর্তী বিশেষ নির্বাহী কে হবেন।
পরিষদের ৪৫২ আসনের বিপরীতে এবার লড়াই করেছেন ১ হাজারের বেশি প্রার্থী। অনেক প্রথম রেকর্ডের জন্ম দেয়া এই নির্বাচনে এবার সব আসনেই চীনপন্থিদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থিদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
এসআইএস/এমকেএইচ