খেলাধুলা

সৌম্য-শান্ত-নাইমরা কি পারবেন এত কঠিন চ্যালেঞ্জ উতড়াতে?

গ্যালারিতে প্রায় হাজার চারেক উৎসাহী সমর্থক। শেরেবাংলার গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে জাতীয় পতাকা উড়ছে। ঠিক যেমন ওড়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলায়। আজ শনিবার প্রাণ-ফ্রুটো ইমার্জিং এশিয়া কাপ ফাইনালে বাংলাদেশ সমর্থকরা এসেছেন প্রিয় দলের সাফল্য দেখতে।

Advertisement

পাকিস্তানের পরবর্তী প্রজন্মের সাথে ফাইনালে শেষ হাসি হাসতে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ। কারণ আগে ব্যাট করতে নেমে ৩০২ রানের বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে পাকিস্তান ইমার্জিং দল।

ভারতের সাথে সেমিতে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর শেষ ওভারে গিয়ে ৩ রানের নাটকীয় জয়ে ফাইনালে আসা পাকিস্তান যে একদমই সহজ প্রতিপক্ষ হবে না- তা আগেভাগেই টের পাওয়া যাচ্ছিল।

তবে ফাইনালের আগে ভাবা হচ্ছিল সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাইম শেখ, আফিফ হোসেন ধ্রুব আর ইয়াসির রাব্বিদের সাথে আসল লড়াইটা হবে পাকিস্তানি তিন ফাস্টবোলারের সাথে।

Advertisement

পেস আক্রমণের মূল হাতিয়ার মোহাম্মদ হাসনাইন। পাকিস্তান মূল দলের হয়ে ৫ ওয়ানডে আর ৪ টি-টোয়েন্টি খেলা এ দ্রুতগতির বোলার এবার প্রাণ-ফ্রুটো ইমার্জিং কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯ রানে ৬ উইকেট দখলসহ ৪ খেলায় ৮ উইকেট পেয়েছেন।

কিন্তু ফাইনালের প্রথম অংশে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরাও কম যাননি। শুরুটা ভালো না হলেও বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের বোলারদের বিপক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যে হাত খুলে খেলেছেন পাকিস্তানিরা। মিডল অর্ডার রোহাইল নাজির, ইমরান রফিক, অধিনায়ক সৌদ শাকিলরা বিগ হিট নিয়ে চার ও ছক্কার ফুলঝুরিতে স্কোর ৩০০’র (৬ উইকেটে ৩০১) ঘরে নিয়ে যান।

টস জিতে আগে ফিল্ডিং করা বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের পেসারদের বোলিং তোপে উল্টো শুরুতে চাপে পড়ে গিয়েছিল পাকিস্তানিরা। বাংলাদেশের এক নম্বর স্ট্রাইক বোলার সুমন খানের বলে ৭.৩ ওভারের মধ্যে ৪১ রানে আউট পাকিস্তানের দুই টপ অর্ডার উমর ইউসুফ( ৪) আর হায়দার আলী (২৬)।

কিন্তু শুরুর সেই চাপ কাটিয়ে তৃতীয় উইকেটে পাকিস্তানের ইনিংসকে নতুন ভাবে সাজিয়ে দেন দুই মিডলঅর্ডার রোহাইল নাজির আর ইমরান রফিক। বাংলাদেশের বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে একটি বড়সড় জুটি গড়ে বসেন তারা।

Advertisement

এর মধ্যে রোহেল নাজির ২৪ রানে জীবন পেয়ে আর পিছন ফিরে তাকাননি। বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামের বলে স্লিপে ইয়াসির আলী রাব্বি তার ক্যাচ ফেলে দেন। আর সেই জীবন কাজে লাগিয়ে সেঞ্চুরি করে বসেন এই পাকিস্তানি।

তার সাথে বিপদে হাল ধরা ইমরান রফিকও হাফসেঞ্চুরি তুলেন করেছেন। ১১৭ রানের লম্বা পার্টনারশিপটি ভাঙেন পেসার হাসান মাহমুদ। তবে ইমরান রফিককে আউট করার কৃতিত্ব যত না বোলার হাসান মাহমুদের, তার চেয়ে অনেক বেশি ফিল্ডার সৌম্য সরকারের। এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে তুলে মেরেছিলেন ইমরান রফিক। দেখে মনে হচ্ছিলো এক ড্রপে চার হয়ে যাবে। কিন্তু ডিপ কভার থেকে বাঁ দিকে অন্তত ১০-১২ গজ সরে একদম দৌড়ের ওপর ক্যাচটি ধরে ফেলেন সৌম্য।

তবে এই জুটি ভাঙার পরও পাকিস্তানিদের রানের চাঁকা থামেনি। রোহাইল নাজির আর অধিনায়ক সৌদ শাকিল মিলে এগিয়ে দেন আরও। শেষ পর্যন্ত নাজিরের উত্তাল উইলেবাজি (১১১ বলে এক ডজন বাউন্ডারি আর তিন ছক্কায় ১১৩) থামান পেসার হাসান মাহমুদ। লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন পাকিস্তানের এই সেঞ্চুরিয়ানকে। হাসান মাহমুদের স্লোয়ারে পরাস্ত হন নাজির।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে অফস্পিনার মেহেদি হাসান (১০ ওভারে ১/৩৯) ছাড়া সবাই মার খেয়েছেন। আগের চার খেলায় ১১ উইকেট পাওয়া পেসার সুমন খান ৩ উইকেট পেলেও দিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বাধিক ৭১ রান। সবচেয়ে বেশি ৭৬ রান উঠেছে সৌম্য সরকারের ১০ ওভারে। আরেক পেসার হাসান মাহমুদের ২ উইকেট নিতে দিতে হয়েছে ৫২ রান। আর বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামের ৮ ওভারে উঠেছে ৪৩।

অথচ পাকিস্তানের এত বড় সংগ্রহ না-ও হতে পারতো। যদি না বাংলাদেশের ফিল্ডাররা বোলারদের ঠিকমতো সাপোর্টটা দিতে পারতেন। এক ইয়াসির আলী রাব্বি তিন তিনটি লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন। আর শেষ ওভারে সহজ ক্যাচ মিস হওয়ার পর ফিল্ডিংয়ে বোকার মতো আউট মিস করেন উইকেটরক্ষক মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ওত ওত ভুলই পাকিস্তানকে হাত খুলে খেলতে দিয়েছে। না হয় ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে এমন চাপ নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামতে হতো না সৌম্য সরকার, নাইম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্তদের।

যদিও বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা বেশ ভালো ফর্মে আছেন। তবে ওয়ানডেতে তিনশোর্ধ্ব রান যে কোনো দলের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ। ম্যাচটা যদি হয় ফাইনাল, বাড়তি চাপ তো থাকেই।

দেখা যাক, সৌম্য-নাইম-শান্তরা সে চাপ উতড়াতে পারেন কি না। সেটা পারলে প্রথমবারের মতো ইমার্জিং এশিয়া কাপের ট্রফি হাতে নেয়ার স্বপ্নটাও পূরণ হবে বাংলাদেশের।

এআরবি/এমএমআর/জেআইএম