অমর একুশের গান হিসেবে খ্যাত 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি'র সুরকার সংস্কৃতিকর্মী ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের নামে বরিশালে প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের’ জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Advertisement
বরিশালের প্রভাবশালী এক শিল্পপতি ‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের’ জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে একাধিক সঙ্গীতপ্রেমী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও স্থানীয় সামাজিক আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন। তারা যে কোনো মূল্যে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের জমি রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। পাশাপাশি সঙ্গীত বিদ্যালয়ের জমি রক্ষার জন্য বরিশালের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করেছেন। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানকে বিদ্যালয়টি যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টার কথা জানিয়েছেন।
‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের’ সঙ্গীত শিক্ষক বীনা সেন জাগো নিউজকে জানান, ১৯৭২ সালে স্থানীয় সঙ্গীতপ্রেমীদের উদ্যোগে অমর ‘একুশে’ গানের সুরকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের নামে একটি সঙ্গীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালে বরিশাল নগরীর সদরের হাসপাতাল রোডের পাশে সাড়ে ১০ শতাংশ জমিসহ একটি একতলা পাকা ভবন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আজিজ আহমেদ। সেই থেকে হাসপাতাল রোডের ওই ভবনে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলে আসছিল। বিদ্যালয়ের কার্যক্রমসহ বিদ্যুৎবিল এবং সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ হয়ে আসছে। তবে ও জমি নগরীর প্রাণকেন্দ্রে এবং মূল্যবান হওয়ায় ওই জমির ওপর দৃষ্টি পড়ে নগরীর প্রভাবশালী এক শিল্পপতির। তিনি ওই জমি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন।
বরিশাল সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের জমির দিকে প্রায় এক যুগ আগে দৃষ্টি পড়েছে ভূমিগ্রাসীদের। ১৯৯৯ সালে নগরীর রূপাতলীর জনৈক রফিক উদ্দিন আহমেদ রফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই জমি নিজেদের এবং তাদের ভোগ দখলে আছে উল্লেখ জনৈক জিয়াউদ্দিন হাসান কবিরকে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। কিন্তু জিয়াউদ্দিন হাসান কবির সঙ্গীত বিদ্যালয়ের ওই জমির ধারের কাছেও যেতে পারেননি। ২০০৭ সালে ওই জমি সরকারি গেজেটভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে রফিক উদ্দিন আহমেদ রফিজসহ তার পরিবারের ৭ সদস্য ফের ওই জমি তাদের নিজেদের দাবি করে নগরীর তথা কথিত সাদা মনের মানুষ শিল্পপতি বিজয় কৃষ্ণ দে’র স্ত্রী শৈল দে’র কাছে ১৬ লাখ টাকায় রেজিস্ট্রিমূলে বিক্রি করেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার মুখে বিজয় কৃষ্ণ দে’ ওই জমি ভোগ দখলে যেতে পারছিলেন না। ২০১২ সালে বিএস রেকর্ডেও ওই সম্পত্তি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হয়।
Advertisement
শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, সঙ্গীত বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তর করে ওই জমি দখলের চেষ্টা করেন বিজয় কৃষ্ণ দে। এ লক্ষ্যে বিজয় কৃষ্ণ দে কালী বাড়ি রোডে একটি ভাড়া ঘরও ঠিক করে দেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যত্র যেতে রাজী না হলে ভেস্তে যায় তার পরিকল্পনা। পরে তিনি ২০১২ সালে বরিশালের যুগ্ম জেলা জজ ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আদালতে মামলা করেন। অবাক করা বিষয় হলো, ভিপি স্যুট মামলায়ও বাদী শৈল দে আদালতকে বিভ্রান্ত করে ওই জমি তাদের ভোগ দখলে আছে বলে উল্লেখ করেন। অথচ গত ২৫ মার্চ বরিশালের যুগ্ম জেলা জজ ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আদালতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই জমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়কে দেয়া হয় এবং ১৯৭২ সাল থেকে ওই স্থানে বিদ্যালয়টি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছে। ওই জমিতে সরকারের পক্ষে লিজপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাদী শৈল দে বা অন্য কারোর কোনো স্বত্ত্ব বা দখল নেই। উল্লেখিত জমি নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে এবং মূল্যবান হওয়ায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে কিছু কাগজপত্র জালজালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা উক্তি ও দাবিতে মামলাটি করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের আবেদনে বলা হয়।
‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের’ সঙ্গীত শিক্ষক বীনা সেন জানান, বরিশালে শহীদ আলতাফ মাহমুদের অন্যান্য স্মৃতি চিহ্ন মুছে গেলেও এ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ভাষা সৈনিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ এবং তার অমর সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পারছিল নতুন প্রজন্ম। দেশ ও জাতীর জন্য জীবন দিয়েছেন আলতাফ মাহমুদ। সুতরাং দেশ ও জাতীর দায়িত্ব আছে তার নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান রক্ষার। কেউ যদি ওই জমি দখল করতে আসে তাদের স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে প্রতিহত করা হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, শহীদ আলতাফ মাহমুদ একজন দেশবরণীয় ব্যক্তিত্ব। যার কাছে পুরো দেশ, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা ঋণী। তার নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির জমি যেন বেহাত না হয়ে যায় সেজন্য আইনানুগ যা করণীয়-তাই করা হবে।
সাইফ আমীন/এমএএস/এমএস
Advertisement