আন্তর্জাতিক

মহারাষ্ট্রের দৃশ্যপটে ফের বিজেপি, ক্ষুব্ধ কংগ্রেস

ভারতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হলেও দেশটির রাজনীতিতে এখনো সবচেয়ে বড় খবর মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন। বিজেপি জোট থেকে বের হয়ে আসা শিবসেনার সঙ্গে কংগ্রেসকে নিয়ে রাজ্যটিতে সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার। কিন্তু এর মধ্যে নতুন গুঞ্জন উঠেছে।

Advertisement

ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা শারদ পাওয়ার সরকার গঠনে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে গুঞ্জনটা উঠেছে সংসদভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার একান্ত বৈঠকের পর। কেননা দুপক্ষের কেউই এই বৈঠক নিয়ে এখনো মুখ খোলেনি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এনসিপি প্রধান শারদ পওয়ারের বৈঠক নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে কংগ্রেসেও। সরকার গঠনের আলোচনাকে কংগ্রেস-শিবসেনা ‘ইতিবাচক’ বললেও অবিশ্বাসের বাতাবরণ রয়ে গেছে সবার মধ্যে। মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর রাতের আরেকটি ঘটনা এই গুঞ্জনে উসকানি দিচ্ছে।

গতকাল রাতে প্রথমে শারদ পওয়ারের বাড়িতে যান কংগ্রেস ও এনসিপির শীর্ষ নেতারা। বৈঠক শেষে দুই দলই ইতিবাচক আলোচনার দাবি করে আরও আলোচনা প্রয়োজন বলে জানান। মুখ্যমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি নিয়েও কথা হয়েছে তাদের মধ্যে। একমত হলে শিগগিরই রাজ্যপালের কাছে চিঠি দেয়ার কথাও বলেছেন।

Advertisement

তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে গতকাল আরেকটা গুঞ্জন বেশ চাউর ছিল। বলা হচ্ছে, শারদ পওয়ারকে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি করার কথা ভাবছে বিজেপি। গতকাল রাতে বিজেপি নেতা নীরজ শেখরের বাড়িতে যান শারদ পাওয়ার। এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই তিনি মেয়েকে সঙ্গে করে সেখানে যান।

তবে তাদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে এ নিয়ে কেউই কিছু বলেননি। তাই বিষয়টি নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হয়। মহারাষ্ট্রে অ-বিজেপি সরকার গঠনের এই সময়ে বিজেপির সঙ্গে এনসিপি প্রধানের এমন দফায় দফায় আলোচনার নেপথ্যে কী, এমন প্রশ্নও ওঠে।

এনসিপি প্রধানের সঙ্গে আলোচনার পর নীরজ শেখরকে ডেকে পাঠান ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। অমিত শাহ তার সঙ্গে কি নিয়ে কথা বলেছেন কিংবা মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের বিষয়ে শারদ পাওয়ারকে কোনো প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে চলছে জল্পনা।

আরেকটি ঘটনা ঘটে গতকাল বুধবার দুপুরে সংসদভবনে মোদির সঙ্গে শারদ পাওয়ার একান্ত বৈঠকের সময়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকের মাঝপথেই অমিত শাহকে সেখানে ডেকে নেন। তারপর সেই জল্পনা আরও বেড়েছে। মোদি-শারদের ওই বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস।

Advertisement

তবে মোদির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার গণমাধ্যমের সামনে দাবি করেন, চলতি বছর ভারী ও টানা বর্ষণে মহারাষ্ট্রের ৫৪ দশমিক ২২ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তাই রাজ্যের কৃষকদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি।

তবে তার এমন দাবি মেনে নিতে পারেননি অনেকে। কেননা মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন যখন গোটা দেশের বড় রাজনৈতিক আলোচনা তখন মহারাষ্ট্রের সরকার গঠনে যিনি তোড়জোড় চালাচ্ছেন তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কী আলোচনা হলো তা না জানতে পেরে শুরু হয়েছে জল্পনা।

ভারতের মহারাষ্ট্রে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন শেষে কোনো দলই সরকার গঠন করতে না পারায় সেখানে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়েছে। বিজেপি, তাদের জোট সঙ্গী শিবসেনা ও এনসিপিকে তিন দফায় সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হলেও সবাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় এই পদক্ষেপ।

মুখ্যমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি নিয়ে বনিবনা না হওয়ার দীর্ঘদিনের জোট শরিক শিবসেনাকে নিয়ে প্রথমে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয় বিজেপি। তারপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে বিজয়ী শিবসেনা ও তৃতীয় সর্বোচ্চ আসনে জয়ী এনসিপিও সরকার গঠনের সুযোগ পেলে তারাও ব্যর্থ হয়।

শিবসেনা ও এনসিপি ব্যর্থ হওয়ার কারণ তাদের দুইদল মিলেও সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসন ছিল না। তাই দুই দলের সরকার গঠন করতে হলে তৃতীয় দল হিসেবে সমর্থন লাগবে কংগ্রেসের। তবে শিবসেনার সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনে প্রথমে আপত্তি জানালেও কংগ্রেসে এখন আলোচনার টেবিলে।

তিন দলের মধ্যে চলমান আলোচনা যখন ইতিবাচক গতিতে আগাচ্ছে তখনই আবার দৃশ্যপটে হাজির বিজেপি। এবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে বিষয়টি দেখছেন। এর আগে দায়িত্ব ছিল অমিত শাহ’র। তবে তিনি শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হওয়ার এবার মাঠে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

বিজেপি যেখানে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র শিবসেনাকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের ভাগ দিয়ে সরকার গঠন করেনি সেখানে এনসিপির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি করবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তাই রাষ্ট্রপতির আসনে শারদ পাওয়ারকে বসিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করতে চাচ্ছে বিজেপি।

প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রের ২৮৮ আসন বিশিষ্ট বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে ২৪ অক্টোবর। বিজেপি ১০৫, শিবসেনা ৫৬, এনসিপি ৫৪ ও কংগ্রেস ৪৪টি আসনে জয়ী হয়েছে। সরকার গঠনে প্রয়োজন ১৪৫ আসন। বিজেপি যদি এনসিপিকে রাজি করাতে পারে তাহলে দুই দল মিলেই মহরাষ্ট্রে সরকার গঠন সম্ভব।

এসএ/জেআইএম