সম্প্রতি পেঁয়াজের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ঝড়ের সাথে হঠাৎই যুক্ত হলো লবণ সংকটের গুজব। আর এ গুজবে কান দিয়ে এক দুপুরেই (কী শহর, কী গ্রাম) প্রায় লবণশূন্য হয়ে গেল মুদি দোকানগুলো। ক্রেতাদের ভিড়ের সুযোগে গুজবকে কাজে লাগিয়ে মাত্র কয়েক ঘন্টায়ই কয়েকগুণ টাকা হাতিয়ে নিলেন দোকানিরা।
Advertisement
বসে ছিলেন না পাইকারী লবণ ব্যবসায়ীরাও। তবে তারা বেশি লাভবান হতে পারেননি। কারণ পেঁয়াজের অস্থির বাজার তৈরির মতো আর সময় দেয়নি প্রশাসন। লবণের দাম বৃদ্ধির গুজবের খবরে ক্রেতারা যেমন দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল, তেমনি প্রশাসনও বেরিয়ে পড়েছিল বাজার মনিটরিংয়ে। তাই পেঁয়াজ কারসাজির মতো এবার আর ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের বেপোরোয়া প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ পাচ্ছেন না।
পেঁয়াজের পর লবণের দাম বৃদ্ধি নিয়ে পরিকল্পতিভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করে সরকারও বলছে, লবণ ও চালের বাজার অস্থিতিশীল করতেই এ গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তবে যারা কারসাজি ও ষড়যন্ত্র করছেন তাদের কাউকে রেহাই দেয়া হবে না, এরকমই হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছে সরকার। তাই আশা করা যাচ্ছে, গত প্রায় তিনমাস ধরে যে পেঁয়াজ কাহন চলছে, লবণ নিয়ে আর সেইরকম গাহন চলবে না।
প্রশ্ন হলো- কারা এই গুজব ছড়িয়েছে। কারা ক্রেতাদের জিম্মি করে লাভবান হতে চেয়েছে? সাথে আবার চালের বাজার অস্থিতিশীল করার কথাও শোনা যাচ্ছিল। আসলে নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্য নিয়ে ভোক্তাদের সাথে এরকম আচরণের অধিকার কে বা কারা খাটাচ্ছে? ব্যবসায়ীদেরই বা এরকম স্বাধীনতা কে দিলো-যা ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে ব্যবসা করার? আদৌ কি কোন উত্তর পাব?
Advertisement
জানা নেই। কিন্তু যারাই করুক, তাদের কি একবারও মনে হয় না যে, মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা খাদ্যপণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে এসে জনগণের সাথে কেন এ হেন বৈরি আচরণ করেন তারা? তারা কি শুধুই ব্যবসায়ী বা ব্যবসার মুনাফাভোগী? যে দেশটার মানুষ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে সুখে-শান্তিতে বাস করার কথা, সে দেশে কেন এখন নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য নিয়ে কথা বলতে হয়? এই ব্যবসায়ী বা ব্যবসার সাথে জড়িতরাও তো এ দেশেরই নাগরিক।
নিজের দেশের মানুষের প্রতি একটা সামাজিক দায়িত্ববোধও তো থাকে মানুষের। এতটুকু দেশপ্রেম বা সততা একজন সুনাগরিকের তো থাকা জরুরি। নাকি এটা ধ্রুব সত্য হয়ে গেছে যে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ী বা সেরকম প্রভাবশালীদের হৃদয়ে দেশপ্রেম থাকবে না, থাকবে শুধু মুখে, কাগজ-কলমে! আমরা চাই না, কাগজ-কলমে থাকুক, সত্যি সত্যি দেশপ্রেম জেগে উঠুক সবার মনে। আর যেন পেঁয়াজ, লবণের দুর্মূল্যে হাহাকার না ওঠে সাধারণের মনে। স্থিতিশীল যেন থাকে চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, বাংলাভিশন।
এইচআর/পিআর
Advertisement