জাতীয়

সরবরাহ লাইন ছাড়াই পানি শোধনাগার, ৬৩৩ কোটির নতুন প্রকল্প

রাজধানীর সায়েদাবাদে পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার (ফেজ-১) নির্মাণকাজ শেষ করেছে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ ঢাকা ওয়াসা। পদ্মা শোধনাগার দৈনিক প্রায় ৪০ কোটি লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। কিন্তু রাজধানীবাসী সেই সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পানি পৌঁছে দেয়ার লাইনের ব্যবস্থা না করেই ওয়াসা এ শোধনাগার নির্মাণ করায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

এখন পদ্মা শোধনাগারের পানি পৌঁছে দেয়ার জন্য লাইন নির্মাণে ৬৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ‘পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগারের (ফেজ-১) পরিশোধিত পানি ঢাকা শহরে সরবরাহের লক্ষ্যে মেইন লাইন নির্মাণ ও শক্তিশালীকরণ’ নামের সেই প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ঢাকা ওয়াসা বাস্তবায়ন করবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, এ প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) আগামী ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে ওয়াসা। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছরের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় চেয়েছে ওয়াসা। তবে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে প্রকল্প শুরুর অনুমোদন করতে।

Advertisement

প্রকল্প সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় ৪০ কিলোমিটারের ডিজাইনসহ পানির লাইন নির্মাণ (৪০০-১৮০০ মিমিডিআই ও স্টিল), প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, যাবতীয় ইউটিলিটি শিফটিং, রাস্তা খনন ও পুনঃনির্মাণ, কেজিং স্থাপন, জেনারেটর স্থাপন, জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব হচ্ছে পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করা। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা গড়ে দুই হাজার ৪০০ এমএলডি পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। যার মধ্যে ৭৮ শতাংশ ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে প্রায় ৯০০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে এবং ২২টি ভূউপরস্থ উৎস থেকে পাঁচটি পানি শোধনাগারের মাধ্যমে সরবরাহ করে। বর্তমানে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরে বসবাস করা আড়াই কোটি নগরবাসীর পানির চাহিদা হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ৪০০ এমএলডি।

বর্তমানে জনসংখ্যা ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে গভীর নলকূপের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। ২০২৫ সালে জনসংখ্যা তিন কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জনগণের জীবনযাত্রার মান ও আর্থসামাজিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটায় তাদের মাথাপিছু পরিমাণগত পানি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পানির চাহিদাও বাড়ছে। এভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০২৩ সাল নাগাদ পানির চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে তিন হাজার ৫০০ এমএলডি।

এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা ওয়াসার লক্ষ্য হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূপৃষ্ঠস্থ পানি সরবরাহ করা। সে লক্ষ্যে সায়েদাবাদ ফেজ-৩, গন্ধর্বপুর ফেজ-১, পদ্মা যশলদিয়া ফেজ-১, পানি শোধনাগার নির্মাণকাজ চলমান, যা ২০২৪ সাল নাগাদ চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগারের (ফেজ-১) কাজ শেষ হলেও প্রয়োজনীয় বিতরণ লাইন বিদ্যমান না থাকায় ওই প্ল্যান্টে পরিশোধিত পানির সম্পূর্ণটা ঢাকা মহানগরীতে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

Advertisement

পদ্মা (যশলদিয়া) শোধনাগারের মাধ্যমে পরিশোধিত দৈনিক প্রায় ৪৫ কোটি লিটার সুপেয় পানি ঢাকা শহরে সরবরাহ করা হবে। ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকার জনগণ উপকৃত হবে। তাই পদ্মা (যশলদিয়া) ফেজ-১ পানি শোধনাগারের পরিশোধিত পানি ঢাকা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরবরাহের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মেইন লাইন নির্মাণের উদ্দেশে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মত হলো, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রকল্পের এলাকা হিসেবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পের এলাকা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন।

পিডি/বিএ/পিআর