নীলফামারীর ডিমলায় চাল সংগ্রহ অভিযানে খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিম্নমানের চাল উত্তোলন করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ায় অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় চলতি বছরে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ১শ ৩২ মেট্রিকটন। প্রথম দফায় ৬ জুন থেকে সংগ্রহ অভিযানের সময়সীমা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। জায়গা সঙ্কুলান ও নানাবিধ জটিলতায় সংগ্রহ অভিযান পরিপূর্ণ না হলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগ্রহ অভিযানের সময় বাড়িয়ে দ্বিতীয় দফায় ২৮ সেপ্টেম্বর করা হয়। খাদ্য গুদামে চাল উত্তোলনের জন্য প্রতি টনে খাদ্য কর্মকর্তা ২ হাজার টাকা হিসেবে ৫৮ লক্ষ ৩০ হাজার ও লেবার ২০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। লেবারদের নিকট এ কমিশনের টাকা নিচ্ছেন উক্ত কর্মকর্তা।সংগ্রহ অভিযানের শুরু থেকে নিম্নমানের পুরাতন ও রেশিও বহির্ভূত চাল মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করা হয়। দুই-একজন হাতে গোনা চাল ব্যবসায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বিলকিস বেগমের সঙ্গে আতাত করে বিভিন্ন অটো চালকল থেকে সর্টার করা পুরাতন ও পঁচা চাল নতুন চাল হিসেবে বস্তা প্রতি একশত টাকা করে ঘুষের বিনিময়ে তা গুদামে উত্তোলন করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চাল ব্যবসায়ী ও মিলারগণ অভিযোগ করে বলেন, শতভাগ নিয়ম মাফিক চাল প্রসেস করলেও খাদ্য কর্মকর্তা বিলকিস বেগম ঘুষ না দেয়ার কারণে তাদের চালের ত্রুটি বের করে তা গুদামে ঢোকার অযোগ্য ঘোষণা করেছেন। খাদ্য কর্মকর্তা একক সিদ্ধান্তে চাল ব্যবসায়ী আহসানুল কবীর লেলিন ও সামছুল হকের পার্টনার নুর আলম পুরাতন চাল নতুন হিসেবে রাতের আধারে, এমনকি ছুটির দিনে গুদাম চাল উত্তোলন করে বিল প্রদান করেন। অযোগ্য ৩শ মেট্রিকটন চাল প্রোগ্রামের নামে জেলার বিভিন্ন উপজেলার খাদ্য গুদামে পাঠিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের নিকট ট্রাক ভাড়া ও লেবার বিল দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। খাদ্য গুদামে উত্তোলনকৃত চালের প্রতি বস্তার ঠিকাদার কতৃক লেবার মূল্য পরিশোধের নিয়ম থাকলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে প্রতি বস্তা উত্তোলনের জন্য ৩৫ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। চাতাল ব্যবসায়ী মাওলানা ইসাহাক বলেন, আমার মিলের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩৫ মেট্রিকটন চাল। খাদ্য কর্মকর্তা বিলকিস প্রতি বস্তায় ১শ টাকা করে দাবি করেন। তার দাবিকৃত ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকার করলে লাইসেন্সে উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী হাসকিং মিলের চাল গুদামজাত করার জন্য নিয়ে গেলেও তিনি চাল অযোগ্য ঘোষণা করে ফেরত দেন। পরবর্তীতে চাল ব্যবসায়ী আহসান কবীর লেলিনের দ্বারা চালগুলো পাঠালে তিনি তা উত্তোলন করেন। চাল ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম, জাহিদ হাসানসহ অনেকেই একই অভিযোগ করেন। চলতি বছরে উপজেলায় ১২৭ জন চাল কল মালিক চাল ক্রয়ের অনুমতি মেলে ৩ হাজার ১শ ৩২ মেট্রিকটন। চাল কল মালিক আহসান কবীর লেলিনের একটি মাত্র চাল কল থাকলেও খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে আতাত করে বেশকিছু মিলের বরাদ্দ ক্রয় করে সে একাই ১ হাজার ১৪০ মেট্রিকটন ও সামছুল হক ৮১০ মেট্রিকটন চাল সরবরাহ করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এসডি-২ খাদ্য গুদামে রাতের অন্ধকারে সামছুল হকের ৫শ বস্তা ও একই রাতে এসডি-৩ আহসানুল কবীর লেলিনের ৬শ বস্তা চাল উত্তোলন করেন।২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৯শ ১৫ মেট্রিকটন চাল উত্তোলন করা হয়েছে মর্মে খাদ্য কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। সরকারি খাদ্যগুদাম সংরক্ষিত এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশের শাস্তি ও জরিমানার বিধান থাকলেও গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে ব্যবসায়ী আহসান কবীর লেলিনকে নির্দিধায় অবাদে চলাফেরা করতে দেখা যায়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ডিমলা খাদ্য গুদামে পঁচা পুরাতন চাল সংগ্রহকে কেন্দ্র করে কিছু ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বিলকিস বেগম জাগো নিউজকে বলেন, আমি নীলফামারী জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। দু-চারজন মন্ত্রী আমার পকেটে। ভেজাল চাল নেয়ার ক্ষমতা আছে বলেই নিয়েছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় খাদ্য বিভাগের লোকজন তদন্তে আসলে তাদের বকশিস দিতে হয়। আমি কী বাড়ির জমি বিক্রির টাকা এনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বকশিস দেব? উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোফাজ্জেল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, চাল ক্রয় করেন খাদ্য কর্মকর্তা। তিনি চালের মান নিশ্চিত করবেন। নীলফামারী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, ঘুষ নিয়ে নিম্নমানের চাল ক্রয়ের বিষয়টি আমার জানা নাই। লেবারদের টাকা নেয়ার নিয়ম নাই। কর্মকর্তাকে বকশিস বা উপঢৌকনের জন্য কর্মকর্তা নিম্নমানের চাল নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দিতে পারেননি। আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল্ল্যাহ আল মামুনের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেতাকে পাওয়া যায়নি। জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/পিআর
Advertisement