জাগো জবস

আজাদুল হক বাংলাদেশের অহংকার

দীর্ঘ ৩৭ বছর আমেরিকায় কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন মাটির টানে। তার ক্যারিশমাটিক সাফল্যের রহস্য এদেশের মানুষ আগেও দেখেছে যখন সালটা ১৯৯৩। দেশের প্রথম নন-লিনিয়ার এডিটিং, বড় পোস্টার প্রিন্টিং, থ্রিডি অ্যানিমেশন এসেছিল তার গড়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠান স্টার অ্যাডভারটাইজারসের হাত ধরে। বর্তমানে তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ম্যাক্স গ্রুপের পাওয়ার ডিভিশনে। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন ক্যারিয়ার ও জীবনের নানা দিক সম্পর্কে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—

Advertisement

আপনার ছোটবেলার কথা বলুন—আজাদুল হক: আমি বড় হয়েছি ঢাকার গ্রীন রোডে। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলাম। ঢাকা কলেজে এইচএসসি পড়েছি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সে পড়াশোনা চলাকালে আমেরিকায় চলে যাই। সেখানে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ি। আমি ছয় বোনের একমাত্র ছোট ভাই।

আমেরিকার কথা জানতে চাই, দীর্ঘসময় ছিলেন সেখানে— আজাদুল হক: আমি প্রথমে ইলিনয় যাই। তার পরে ৮৪ সালের দিকে হিউস্টনে চলে যাই। পড়াশোনা শেষে ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টনের মাইক্রো কম্পিউটার ল্যাবে সুপারভাইজার ছিলাম। তখন অ্যাপল ম্যাকিনটস মাত্র বের হয়েছে। তখন থেকে আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে না গিয়ে আইটিতেই ছিলাম। এরপর ডিস্কটেক নামে এক কোম্পানিতে প্রোগ্রাম ম্যানেজার ছিলাম। তারপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেছি হিউস্টনের কম্পিউটার এক্সপোতে।

কোর ইইই ইঞ্জিনিয়ার হয়েও আমেরিকা আমাকে আইটিতে দক্ষ করে গড়ে তুলল! হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরবো। আমার একজন শুভানুধ্যায়ী ড. সেলিম রশিদ আমাকে তখন বললেন দেশে গিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে, একজনের কন্টাক্ট ডিটেইলস দিলেন।

Advertisement

আবার যখন ঢাকায় ফিরলেন—আজাদুল হক: সময়টা ১৯৯২ সাল। দেশে ফিরে আমি যোগাযোগ করলাম ড. মোসলেহ উদ্দিন স্যারের সাথে নর্থসাউথে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা! আমি একদম প্রথম কয়েকজনের একজন, জয়েন করলাম আইটি বিভাগে। অনেক কিছুই গড়ে দিয়ে যখন আমি আমেরিকায় চলে যেতে চাইলাম; তখন ১৯৯৩ সালে আমার সাথে পরিচয় ইফতেখার আহমেদ কিসলুর। স্টার অ্যাডভারটাইজারসে দায়িত্ব নিলাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে। আমি একে একে ৯৮ সাল পর্যন্ত দেশের অগণিত প্রথিতযশা শিল্পীদের সাথে কাজ করলাম। মনে পড়ে আইয়ুব বাচ্চু ভাই, তারেক মাসুদ ভাইয়ের কথা। তারেক ভাইয়ের মুক্তির গান ও আদম সুরতের সাবটাইটেল করেছিলাম। এছাড়া নতুন নতুন অনেক প্রযুক্তি আমরা এনেছিলাম দেশে। এগুলো এদেশে নতুন প্রাণ দিলো পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে।

১৯৯২ সালে বিয়ে করি, আমার দুই ছেলে সন্তান আছেন। আমার একসময় আবার মনে হলো, আমার আমেরিকায় আরও কিছু কাজ করা উচিত।

এরপরই কি নাসায় কাজ করা হলো—আজাদুল হক: আমি আবার চলে গেলাম আমেরিকায়। জয়েন করলাম নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে লকহিড মার্টিনের কন্ট্রাক্টে। কাজ করেছি লাইফ সায়েন্স ডাটা সিস্টেমে, টেলিসায়েন্স সাপোর্ট সেন্টারে (টিএসসি)। এরপর আমেরিকার ৩য় বৃহত্তর এনার্জি কোম্পানি কিন্ডার মর্গানে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০ বছর চাকরি করলাম। যখন শুরু করেছিলাম; তখন এ কোম্পানি ছিল ২০ বিলিয়ন ডলারের। যখন চলে আসি; তখন সেটা ছিল ১৩৫ বিলিয়ন ডলারের! এই ২০ বছর অনেক ধরনের গল্পে কেটে গেছে। সবসময়ই আমি আশাবাদী ছিলাম বাংলাদেশকে নিয়ে। ফোবানা নামের সংগঠনের সেক্রেটারি ছিলাম পরপর চার বার, তারপর হলাম চেয়ারম্যান। সবসময়ই ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের জন্য কিছু করার।

বাংলাদেশে ফিরে বর্তমান কার্যক্রম— আজাদুল হক: মূলত এ বছরের এপ্রিলে দায়িত্ব নেই ম্যাক্স পাওয়ারের। ম্যাক্স পাওয়ারের দুটো পাওয়ার প্লান্ট আছে। একটি ঘোড়াশালে, আরেকটি কুশিয়ারায়। আমরা পায়রা বন্দর থেকে বিদ্যুৎ আনার জন্য ৪০০ কেভির ডাবল সার্কিট ট্রান্সমিশন টাওয়ার তৈরি করছি। এছাড়া আমরা রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে বানাচ্ছি টারবাইন হল, কুলিং টাওয়ার, ট্রেনিং সেন্টার, শোর প্রটেকশন।

Advertisement

আমি কনভেনশন অব এনআরবি ইঞ্জিনিয়ার্স বা কোনের কনভেনর ছিলাম, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। আমার বক্তৃতায় তাকে বলেছিলাম, আমরা ব্রেইন ড্রেইনকে করতে চাই ব্রেইন গেইন। সেই কথার ভিত্তিতেই দেশে চলে আসা। কোনের সময় বক্তৃতার মাধ্যমে কিছু মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম যা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আমার প্রস্তাবনাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। বলেছিলাম, আমরা বাংলাদেশে নাসার আদলে একটি স্পেস সেন্টার গড়ে তুলতে চাই। অচিরেই হয়তো কোনো একসময় আমরা রকেট পাঠাতে পারবো আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিতেই। সেটা না পারলেও তৈরি করতে পারব আরও অনেক কিছু। যা স্পেস সায়েন্সকে সাহায্য করবে।

এত বছরে কী কী পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন দেশে ফিরে?আজাদুল হক: পরিবর্তন তো অনেক। কালচার বদলে গেছে, সবাই এখন অনেক টেক স্যাভি। তবে এই পরিবর্তনগুলো আসায় মানিয়ে নিতে সুবিধা হচ্ছে আমার।

তরুণদের মধ্যে যারা চাকরিপ্রার্থী, তাদের জন্য পরামর্শ—আজাদুল হক: অনেক ভালো যোগাযোগ দক্ষতা হতে হবে, নিজেকে ম্যানেজ করে চলতে হবে। স্কিল তো অবশ্যই প্রথম, ক্রিয়েটিভিটি দেখিয়ে কম সময়ে কাজ করে আনতে হবে! সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা, তা হলো– চিন্তা করতে হবে, কেন আমরা একটি কাজ করছি। তারপর ভাবতে হবে, এটা আরও ভালো করে কিভাবে করা যায়।

এসইউ/জেআইএম