দেশজুড়ে

সুদের টাকা আদায়ে বসতবাড়ি লিখে নিলেন দাদন ব্যবসায়ী

নওগাঁর রানীনগরে এক দাদন ব্যবসায়ী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পাওনা টাকার পরিবর্তে বসতবাড়ি লিখে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার নাম মিজানুর রহমান ওরফে মিজু খন্দকার। তার খপ্পরে পড়ে এখন দিশেহারা হতদরিদ্র গৌর সরকার।

Advertisement

অভিযোগ উঠেছে দাদনের টাকা আদায়ে কৌশলে গৌর সরকারকে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে বায়নার নাম করে বসতবাড়ি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন মিজানুর রহমান। এছাড়া অনেকেই তার দাদনের টাকা শোধ করতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।

এলাকাবাসীরা জানান, মিজানুর রহমান উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সমতুল খন্দকারের ছেলে। আর গৌর সরকার কুজাইল হিন্দু পাড়ার মৃত বিরেন সরকারের ছেলে।

এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ করেছেন গৌর সরকার।

Advertisement

জানা গেছে, উপজেলার আতাইকুলা গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী রশিদুলের কাছ থেকে এক বছর আগে সাংসারিক ও দোকানের প্রয়োজনে গৌর সরকার সুদে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন। এর কিছুদিন পর রশিদুল একটি সাদা স্ট্যাম্পে গৌর সরকারের স্বাক্ষর নেন। প্রায় ছয়মাস আগে কুজাইল বাজারে গৌর সরকারের চায়ের দোকানে এসে রশিদুলের সঙ্গী মিজানুর রহমান ও কুজাইল গ্রামের অহিদুল এসে পাওনা টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।

এক পর্যায়ে গৌর সরকারকে মোটরসাইকেলে করে মিজানুর ও অহিদুল রানীনগর ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে মিজানুর রহমান তার কাছ থেকে জোর পূর্বক বায়না নামা রেজিষ্ট্রি করে নেয় এবং বলা হয় টাকা ফেরত দিলে বায়না নামা বাতিল করা হবে। পরে গৌর সরকার জানতে পারেন তার বসতবাড়িসহ মোট ১৬ শতক জমি বায়না নামা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। যেখানে গৌর সরকারকে ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা প্রদান এবং জমির মূল্য ৫ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া, রশিদুল সুদের টাকার চাপে ফেলে কুজাইল গ্রামের তপন সরকারের বসতবাড়ি ও সুদেব সরকারের জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। বাড়ি বিক্রি করে পরিবারসহ বিপ্লব সরকার ও বসতবাড়ি ছেড়ে প্রদীপ সরকার অন্যত্র পালিয়ে গেছেন। এভাবে রশিদুলের সুদের টাকার ভয়ে হালদার পাড়া থেকে সুশিল হালদারসহ আরও অনেকে পালিয়ে গেছেন। এ অবস্থায় এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা এ দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে চান।

ভুক্তভোগী তপন সরকার বলেন, দুই বছর আগে ৩০ হাজার টাকা সুদের উপর নিয়েছিলাম। অনেক টাকা সুদ দিলেও আসল টাকা পরিশোধ হয়নি। তারপরও বিভিন্নভাবে রশিদুল বাড়িতে এসে চাপ সৃষ্টি করে। পরে বাধ্য হয়ে বসতবাড়ির ৪ শতক তাকে স্বল্প মূল্যে রেজিস্ট্রি করে দিতে হয়েছে।

Advertisement

ভুক্তভোগী গৌর সরকার বলেন, আমি একজন অসহায় গরীব মানুষ। নাম সই ছাড়া আর কিছুই জানি না। রশিদুলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। কিন্তু তার সঙ্গী মিজানুর রহমান এসে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করত। একদিন জোর করে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়। পরে জানতে পারি আমার বসতবাড়িসহ বায়না নামা রেজিস্ট্রি করে নেয়া হয়েছে। আমার বাড়ির আশপাশে জমির সর্বনিম্ন মূল্য ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা শতক। আমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে দাদন ব্যবসায়ীরা বায়না নামা রেজিস্ট্রি করেছে। এখন তারা আামকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসনের কাছে এর সঠিক বিচার দাবি করছি।

প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় নাম কয়েকজন বলেন, রশিদুল সুদের টাকার চাপে ফেলে অনেকের কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। তার ভয়ে ৮/৯ মাস আগে সুশিল হালদার বসতবাড়ি ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে রশিদুল বলেন, গৌর সরকারের সঙ্গে তার কোনো প্রকার লেনদেন ছিল না বা নেই। আমি জড়িত থাকলে টাকা দেয়ার সময় ঘটনাস্থলে থাকতাম। পুরোটাই মিথ্যা অভিযোগ। আর মিজানুর রহমান আমার আত্মীয় হওয়ায় তার সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এক সময় সুদের ব্যবসা করতাম। দুই বছর আগে ছেড়ে দিয়েছি। তবে, মাঠে কিছু টাকা আছে। আর যে কয়জনের জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি তাদের কাছ থেকে বাজার মূল্যে ন্যায্য দাম দিয়ে কিনেছি। আর কয়েকজন আমার পাওনা টাকা না দিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।

এ বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, গত ৬ মাস আগে ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকার বায়না নামা রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল। এখন ওই জমির দাম অন্যরা বেশি বলায় গৌর সরকার জমি আমাকে না দেয়ার জন্য বিভিন্ন টালবাহানা করছেন। এতোদিন কোনো কথা ছিল না। তাহলে হঠাৎ করে কেন এসব কথা হচ্ছে। তবে সুদের কোনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে তিনি পুকুরের ব্যবসা করে জীবন যাপন করেন বলে জানান।

রানীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল মামুন বলেন, এলাকায় দাদন ব্যবসা মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে এক ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আব্বাস আলী/এমএমজেড/পিআর