চরম অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় চলছে ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা)। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা এবং অযত্নের কারণে প্রায় শতাধিক এতিম শিশুর দিন কাটছে অতিকষ্টের মধ্যে। এসব এতিম শিশুদের নেই কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা। সুইপার ঝাড়ুদারের কাজ করতে হয় কোমলমতি এই শিশুদেরকেই। এমনকি রান্নার কাজেও সহযোগিতা করতে হয় মেয়েদেরকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন জনবলের অভাবের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পাওয়ায় ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) নানা সমস্যায় জর্জরিত।সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের জগন্নাথপুর এলাকায় ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি শিশু পরিবারে বর্তমান ১০০ জন এতিম মেয়ে শিশু রয়েছে। ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-পঞ্চগড়ের একমাত্র বালিকা শিশু পরিবার এটি। চারতলা বিশিষ্ট ওই ভবনের প্রত্যেক কক্ষ বালিকা দিয়ে পরিপূর্ণ। বিস্তর খেলার মাঠ থাকলেও নেই কোনো খেলার সরঞ্জাম। শিশু পরিবারের পিছনের দেয়ালে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে শিশুরা। সব মিলে ভালো নেই শিশু পরিবারের শিশুরা।ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্ববধায়কের কার্যলয় সুত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে তিন একর জমির উপর ১০০ আসন বিশিষ্ট একটি টিন সেডে সরকারি শিশু সদন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন ভবন নির্মাণের পর এখানকার জনবল বাড়ানো হয়নি আজও। ১৮ জন কর্মকতা, কর্মচারী ও শিক্ষকের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ১৩ জন। এরমধ্যে উপ-তত্ববধায়কের পদ ও সহকারী উপ-তত্ত্বাবধায়কের পদ শূন্য। একইভাবে শূন্য রয়েছে অফিস সহকারীর-সহকারী শিক্ষকের পদ। তাছাড়া নার্স ও বড় ভাইয়ের পদও শূন্য রয়েছে এখানে। বাবুর্চি দুইজনের মধ্যে আছে একজন।শিশু পরিবারের বালিকা পপি আকতার বলেন, এখানে লোকবল সংকটের কারণে আমাদেরকে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতে হয়। বর্তমান ডিজিটাল যুগেও আমরা অনেক পিছনে পড়ে আছি। আমাদের এখানে কোনো কম্পিউটার নেই। কম্পিউটার হলে আমরা যুগের সাথে নিজেদেরকে তৈরি করতে পারবো।আরেক বালিকা শাহনাজ পারভিন বলেন, আমরা বিকেলে একটু খেলাধুলা করতে চাই, কিন্তু আমাদের এখানে কোনে খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই। আমাদের শিশু পরিবারের একটি বাউন্ডারি ওয়ালে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় বখাটে ছেলেরা ওই পাশদিয়ে আমাদেরকে বিরক্ত করে।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবারের ভারপ্রাপ্ত উপ-তত্ত্বাবধায়ক সাইয়েদা সুলতানা বলেন, এখানকার প্রধান সমস্যা জনবলের অভাব। বহুবার জনবল বাড়ানোর জন্য লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ফলে এতগুলো পদ শূন্য থাকায় ১০০ শিশুর পরিচর্যা করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও চেষ্টা করা হয় এসব এতিম শিশুরা যাতে কষ্ট না পায়।রবিউল এহসান রিপন/বিএ
Advertisement