তিস্তা ব্যারেজ এবং ব্যারেজ সংলগ্ন তিস্তা পাড় দিনকে দিন দর্শনীয় স্থান হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বছর গড়িয়ে ঈদ আসা মানেই তিস্তা পাড়ে হাজারও দর্শনার্থীর পদচারণা বেড়ে যাওয়া। এবারও ঈদ উপলক্ষে এর ব্যতিক্রম নয়। এ যেন লোকালয়ের কোনো নদী তীরে সৈকতের ছোঁয়া।রংপুর থেকে নীলফামারী হয়ে তিস্তা ব্যারেজের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। ব্যারেজের অদূরেই বাসস্ট্যান্ড, যেখান থেকে হেঁটে বা ভ্যান-রিকশা যোগে সহজেই নদী পাড়ে যাওয়া যায়। মূল অবকাঠামো লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় হলেও ব্যারেজটি ডালিয়া নামক স্থানের মধ্য দিয়ে নীলফামারী জেলাকেও সংযুক্ত করেছে। ১৯৯০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ প্রজেক্টের উদ্বোধন করেন। সেচের জন্য তৈরি প্রকল্পটি পানির অভাবে দিনে দিনে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। ভারতের পশ্চিবঙ্গ সরকারের বৈরী আচরণের কারণে নব্যতা হারিয়ে এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা এখন প্রায় সারা বছরই পানি শূন্য থাকে। ভরা বর্ষাতেও তিস্তার বুকে ধু-ধু বালুর চর। গভীরতা না থাকায় উজান থেকে নেমে আসা সামান্য পাহাড়ি ঢলেই দু’কূল উপচে পড়ে। ফলে ভাঙনে নদী পাড়ের মানুষের চোখের পানিতে তিস্তার পানি যেন একাকার হয়ে যায়। এমন দুঃখগাঁথাতেও ঈদ বা বিশেষ দিনগুলোতে সুখময় মুহূর্ত নিয়ে আসছে ব্যারেজ ও ব্যারেজ সংলগ্ন তিস্তা পাড়। ঈদের দিন বিকেল থেকে শুরু করে প্রায় সপ্তাহ ধরে তিস্তা পাড়ে যেন তিল ধরার ঠাঁই থাকে না। দারিদ্রপীড়িত উত্তরবঙ্গের বিনোদন কেন্দ্র বলতে এখন দোয়ানি-ডালিয়ার তিস্তা পাড়-ই। এটি লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষের কাছে এখন অতিপরিচিত একটি বিনোদন কেন্দ্র। উত্তরবঙ্গের সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠা বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও একবার তিস্তা ব্যারেজে দর্শন দিয়ে যায়।সকলের জন্য উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্রটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে থাকে। একেবারে গ্রাম্য পরিবেশে হলেও নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোনো ঝুঁক্কি পোহাতে হয় না দর্শনার্থীদের। পাড়ে ছোট ছোট দোকানে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায় নাস্তা-খাবারও। ব্যারেজের বিশেষ অবকাঠামো, অবসর (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন), কন্ট্রোল রুম, ব্লক আর পাথরে পিচিং করা নদী পাড়, ফুল আর বনোজ গাছের বাগানগুলো ঘুরতে আসা মানুষগুলোর যেন সহজেই মন কাড়ে। মন চাইলে পাল তোলা নৌকাতেও দল বেঁধে ভ্রমণ করার সুযোগ মেলে তাদের।ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার পঞ্চগড় থেকে বেড়াতে এসেছেন সবুজ সান্ডাল। সঙ্গে আরো পাঁচ বন্ধু। এই দর্শনার্থীরা জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্পটি দেখার আগ্রহ ছিল অনেক আগে থেকেই। এবারে বন্ধুরা মিলে ছুটির সুযোগটি হাত ছাড়া করিনি। এতো কাছে এমন সুন্দর একটি জায়গা না দেখলে বিশ্বাস হত না।লালমনিরহাট সদর থেকে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন শাহিনা আকতার। স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন দু’বছর হয়। তিনি বলেন, অনেকবার এসেছি। যত আসি ততই মন টানে। চাইলেও কক্সবাজার বারবার যাওয়া যায় না। কিন্তু গ্রামে এলে এখানে আসতে কোনো মানা নেই। তিস্তা পাড়েই সমুদ্র তীরের আনন্দ অনুভব করি।এএসএস/আরএস/আরআইপি
Advertisement