টানা আন্দোলনে এখনও অচল অবস্থায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ৩৮ দিন ধরে বুয়েটে স্থবির অবস্থা তৈরি হয়েছে। কবে বুয়েট ক্যাম্পাস সচল হবে তাও অনিশ্চিত।
Advertisement
তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্যাম্পাস সচল হবে বলে আশা করছেন শিক্ষকরা। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা চলতি বছরের সিলেবাস থেকে পিছিয়ে পড়ছেন এবং সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন বলে বুয়েট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক নিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, আবরার হত্যার বিচারে ইতোমধ্যে পুলিশ চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে। আমাদের কাছে তার একটি কপি দেয়া হবে। সেটি পেলে বুয়েটের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া হবে। তার ভিত্তিতে যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তাদের স্থায়ীভাবে বুয়েট থেকে বহিষ্কার করা হবে।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বুয়েট প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের একটি দাবি পূরণ অসম্পন্ন ছিল। আমরা আশা করছি, অপরাধীদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হলে সে দাবি বাস্তবায়ন হবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা ফিরবেন। এ বিষয়ে বুয়েট উপাচার্য ও আমাদের (শিক্ষকদের) সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। আমরা আশা করি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আবারও বুয়েট ক্যাম্পাস সচল হবে। শিক্ষার্থীদের প্রধান কাজ ক্লাস-পরীক্ষায় মনোনিবেশ করবেন।
Advertisement
তবে আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কার করলেই ক্লাসে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা নতুন করে আরও তিন দফা দাবি জুড়ে দিয়েছেন বুয়েট প্রশাসনকে। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
জানতে চাইলে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমন্বয়ক অন্তরা তিথি জানান, আমরা অনেকগুলো দাবি থেকে সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর বুয়েট প্রশাসনকে তিনটি দাবি জানিয়েছি। সেগুলোর মধ্যে আছে- চার্জশিটভুক্ত আসামিদের স্থায়ী বহিষ্কার, সাম্প্রতিক র্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোর তদন্ত ও বিচার, কেউ কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার শাস্তির বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন। কিন্তু দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে কোনো জবাব পাইনি।
তিনি বলেন, আজকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসবো। সেই সঙ্গে বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের অবস্থান জানানো হবে।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
Advertisement
আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় গতকাল বুধবার ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ চার্জশিট মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এমএইচএম/এমএসএইচ/জেআইএম