বিশ্বে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সমস্যা। সচেতন না হলে ধীরে ধীরে আপনাকে নিঃশেষ করে দিতে পারে এই নীরব ঘাতক। জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতাই পারে একে নিয়ন্ত্রণ করতে। তাই ডায়াবেটিস রুখে দিতে সচেতনতাই একমাত্র অস্ত্র।
Advertisement
ডায়াবেটিস কী?আমরা যখন কোনো খাবার খাই তখন আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, তা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্য। এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানী বা শক্তি হিসেবে।শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হতে না পারে অথবা এটি ঠিকমতো কাজ না করে তখনই ডায়াবেটিস হয়। এবং এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো এ রোগের মূল কথা। একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।
ডায়াবেটিসের উপসর্গ:* বেশি তৃষ্ণা পাওয়া* স্বাভাবিকের চাইতেও ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।* ক্লান্ত বোধ করা* কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া* প্রদাহজনিত রোগে বারবার আক্রান্ত হওয়া* দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া* শরীরের কোথাও কেটে গেলে সেটা শুকাতে দেরি হওয়া।
যেসব সমস্যা হতে পারে:* রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।* স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।* দৃষ্টি শক্তি হারাতে পারে। * ইনফেকশন হতে পারে পায়ে।* অন্ধত্ব, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির ভয় থাকে।
Advertisement
ডায়াবেটিস যদিও জেনেটিক এবং আপনার জীবন যাপনের ধরনের ওপর নির্ভরশীল তারপরও চেষ্টা করলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারেন। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে যা খাবেন:
বাদাম: বাদামে প্রচুর আঁশ, পুষ্টিকর উপাদান ও হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারি উপাদান আছে। দৈনিক ১০ গ্রাম বাদাম গ্রহণ করলে মারণব্যাধি রোগের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে বলে দাবি গবেষকদের।
মাছ: মাছে থাকে প্রচুর প্রোটিন। একটি সুস্থ জীবনধারার জন্য প্রোটিন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। মাছে ওমেগা-৩ আছে এবং যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায়। মাছ বেশি করে ভেজে খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
Advertisement
বেরি বা জাম জাতীয় ফল: জাম জাতীয় ফলে অ্যানথোসায়োনেনস নামের উপাদান রয়েছে যা মানবদেহের রক্তের ইনসুলিন ভারসাম্য ঠিক রাখে ও রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।
মটরশুঁটি ও ব্রোকলি: ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অনেক উপকারী। মটরশুঁটিতে আছে ভরপুর ফাইবার। মটরশুঁটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রাকে সাধারণ মাত্রায় রাখে। ব্রোকলি একটি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এমন একটি বিশেষ যৌগ আছে যা ডায়াবেটিস এর সাথে যুদ্ধ করে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
চা: চা এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি পানীয়। গ্রিন-টি বা সবুজ চা কিংবা রং চা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। তবে, চায়ে চিনি মেশানো যাবে না।
আপেল: আপেল রোগ প্রতিরোধক ও পুষ্টিকর একটি ফল। আপেলে শর্করা প্রায় ৫০ শতাংশ। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও রক্তে কোলেস্টরল এর মাত্রা স্থির রাখে।
রসুন: রসুনের উপকারিতা অনেক। রান্নার পাশাপাশি রসুন স্বাস্থ্য ভালো রাখার ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। রসুন কোলেস্টরল এর মাত্রা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
পালং শাক: পালং শাকে আছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট। তাজা এবং অল্প সেদ্ধ করে খেলে বেশি এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। পালং শাক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে সুপরিচিত খাবার এর মধ্যে রয়েছে পালং শাক।
দারুচিনি: দারুচিনিতে আছে প্রচুর মিনারেল ও ভিটামিন। এটি রক্তে কোলেস্টরল এর পরিমাণ ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এটি হৃদয় সুস্থ রাখে। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ ও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলু ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে ইনসুলিন এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এইচএন/জেআইএম