দেশজুড়ে

নওগাঁয় ৪টি ব্রিজের সংযোগ সড়ক নেই

নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি থেকে ভীমপুরের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা এটি। রাস্তা থাকলেও বছরের চারমাস থাকে পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় কালিপুর, সুনুলিয়া, হাতাস, প্রতাবদহ ও শশিধরপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষকে।

Advertisement

শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে আর বর্ষা মৌসুমে নৌকায় তাদের একমাত্র ভরসা। ভীমপুর থেকে বারোমাসা বিল (বিল মুনছুর) পার হয়ে হাতাস গ্রাম। দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। যেখানে সড়কের সংযোগ ছাড়াই রয়েছে ৪টি ব্রিজ। বর্ষা মৌসুমে এ ব্রিজগুলো কোনো কাজে আসে না। রাস্তা হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, দীর্ঘদিন ধরে এমন স্বপ্ন দেখছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, সদর উপজেলা আরজি-নওগাঁ শাহী মসজিদ থেকে ভীমপুর ইউনিয়নের ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়ক। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ হয়েছে। আর দুবলহাটি বাজার থেকে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত বাকি আছে ৬ কিলোমিটার। দুবলহাটি বাজার থেকে হাঁসাইগাড়ি বিলের মধ্য দিয়ে কাটখৈর বাজার হয়ে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত যে পাকা সড়ক রয়েছে তার দূরত্ব প্রায় ১৫কিলোমিটার।

অপরদিকে, দুবলহাটি বাজার থেকে প্রতাবদহ, শশিধরপুর, কালিপুর, চোয়ারাপাড়া, হাতাস, মধ্যহাতাস ও সুনুলিয়া গ্রাম হয়ে বারোমাসা (বিল মুনছুর) বিলের মাঝ দিয়ে ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হলে প্রায় ৯ কিলোমিটার সাশ্রয় হবে। এ এলাকাগুলো সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা। এসব গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে ঠিক সময়ে নিতে পারে না।

Advertisement

বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রামের মানুষের চলাচলে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকা তাদের একমাত্র ভরসা। বর্ষার সময় এ গ্রামগুলো দূর থেকে দেখলে মনে হবে ছোট ছোট দ্বীপ। এই ৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হলে সদর উপজেলাসহ জেলার মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে।

স্থানীয়রা জানান, বন্যার সময় গ্রামগুলোর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। ব্রিজ আছে কিন্তু রাস্তা নেই। রাস্তা হলে অনেক উপকার হতো। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে দ্রুত বোরো ধান সংগ্রহ করা যেত। এমনকি ফসলের চাষ ও পরিচর্যাও করা যেত সহজেই। শুধু যাতায়াত বিড়ম্বনার জন্য ফসল অনেকটা কম হচ্ছে। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হলে বোরো চাষাবাদ করতে সহজ হয়। এমনকি আরও কয়েকশ টন ধান বেশি উৎপাদন হবে বলে এলাকাবাসীর প্রত্যাশা। রাস্তা হলে সহজেই ক্ষেতের জমিতে যাতায়াত করা এবং সময়, শ্রম ও ফসলহানীর শঙ্কাও কমে যেত। আর ফসলের উৎপাদনও হতো দ্বিগুন।

ভীমপুর গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান সরদার বলেন, তার ১২ বিঘা জমি এ বিলে আছে। হাজার হাজার বিঘা জমি রয়েছে বারোমাসা বিলে। ধান কাটার সময় হঠাৎ করে বৃষ্টি হলে ফসল ডুবে যায়। তখন ধান কাটা ও জমি থেকে উঠানো নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় কৃষকদের। এতে শ্রমিক খরচ বেশি পড়ে। কয়েকটি ব্রিজ পানির মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রাস্তা থেকেও নেই বললেই চলে। যদি রাস্তাটি সংস্কার করা হয় তাহলে ধান কেটে সহজেই রাস্তায় উঠিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসা সম্ভব।

ভীমপুর গ্রামের এসএম জালাল হোসেন পিন্টু বলেন, ব্রিটিশ সময় থেকে রাস্তাটি আছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে রাস্তাটি কোনো কাজে আসছে না। উপর থেকে পানি এসে মাঠের ধান ডুবে যায়। গত বছর একটি খাল খনন হওয়ার পর কিছুটা উপকার হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে যেখানে ২ হাজার টাকা খরচ হতো সেখানে বৃষ্টির কারণে ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এ রাস্তাটি হয়ে গেলে জেলা শহরের সঙ্গে দূরত্ব অনেক কমে যাবে। অল্প খরচে মানুষ চলাচল করতে পারবে। ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ (চার) মাস পর্যন্ত রাস্তা ডুবে থাকে। অগ্রহায়ণের শেষের দিকে রাস্তা জেগে উঠে। এলাকার কয়েক হাজার বোরো চাষিদের ক্ষেতে মাঠে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি।

Advertisement

নওগাঁ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইমতিয়াজ জাহিরুল হক বলেন, ওই রাস্তা সংস্কারে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসার পর রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।

নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই রাস্তাটি এলাকাবাসীর জন্য খুবই জরুরি। রাস্তা করা হলে বিশেষ করে কৃষি কাজের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। প্রতি বছরই কৃষকদের ফসল নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা রাস্তাটি সংস্কারের জন্য আলোচনা করেছি।

আব্বাস আলী/এমএএস/পিআর