নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও ক্ষমতা অপব্যবহারের তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটের শুনানি স্ট্যান্ডওভার (মূলতবি) করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যদি কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা দেখব।
Advertisement
মঙ্গলবার অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন এ রিট করেন। রিটের বিষয়ে আজ হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হয়। পরে আদালত রিট মামলাটির শুনানি স্ট্যান্ডওভার মূলতবি রাখেন।
আদালতে আজ রিটকারী অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আদালত রিটকারী আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আগে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করেন। দুদক যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয় তারপর আপনারা হাইকোর্টে আসেন। তখন আমরা বিষয়টি দেখবো। এরপর আদালত রিট আবেদনটির শুনানি মূলতবি করেন।
Advertisement
এর আগে এসপি হারুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও ক্ষমতা অপব্যবহারের তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালেহ উদ্দিন এ রিট করেন। রিটে এসপি হারুনের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুনীর্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২ ডিসেম্বর ডিএমপি থেকে নারায়ণগঞ্জের এসপি হিসেবে বদলি করা হয় হারুনকে। বছরপূর্তির এক মাস আগে গত ৩ নভেম্বর তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চাঁদার জন্য তিনি নারায়ণগঞ্জের একাধিক শিল্পপতিকে তুলে নিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেফতার দেখানোর ভয় দেখিয়েছেন।
হারুনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগ করেন পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেমের ছেলে ও আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ (রাসেল)। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। পরে তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর রাসেল তার স্ত্রী-পুত্রকে একটি পার্টিতে নামিয়ে ঢাকা ক্লাবে আসেন। ক্লাব থেকে বেরিয়ে দেখেন তার গাড়িটি নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন গাড়ি আছে নারায়ণগঞ্জে। পরদিন রাতে তার অনুপস্থিতিতে হারুন একদল পুলিশ নিয়ে তার গুলশানের বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করেন। এরপর তার স্ত্রী-সন্তানকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যান। এ বিষয়ে নিকটস্থ গুলশান থানাকে কিছু জানায়নি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। পরদিন তার খোয়া যাওয়া গাড়িতে ইয়াবা, মদ ও গুলি উদ্ধারের ঘটনা সাজিয়ে তার ও তার গাড়িচালকের নামে মামলা করেন। গুলশানের বাসা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেন রাসেল।
Advertisement
গত ২ নভেম্বর নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভিন্ন একটি গল্প শোনান হারুন। তিনি দাবি করেন, শওকত আজিজের গাড়ি থেকে ২৮টি গুলি, ১ হাজার ২০০ ইয়াবা বড়ি, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ৪৮ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় গাড়িতে শওকতের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও সন্তান আনাব আজিজ ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয়েছিল। পরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এম এ হাসেম সহযোগিতা করবেন বলে মুচলেকা দেয়ায় তার স্ত্রী-পুত্রকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এফএইচ/এমএসএইচ/জেআইএম