আইন-আদালত

তুরিনের বিরুদ্ধে মামলার ইঙ্গিত জেয়াদ আল মালুমের

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের অন্যতম সদস্য প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। তবে অপসারণ হওয়া প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।

Advertisement

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এক আসামির সঙ্গে গোপন বৈঠকের প্রমাণ পাওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ করে সোমবার (১১ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এরপর এক প্রতিক্রিয়ায় প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ওই মন্তব্য করেন।

প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, পেশাগত অসদাচরণের দায়ে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার। এ ধরনের গুরুতর অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে উপমহাদেশে বা আমার জানা মতে বিশ্বের ট্রাইব্যুনালগুলোর মধ্যে প্রথম কোনো প্রসিকিউটরকে অপসারণ করা হলো। তার কৃতকর্মের জন্য ফৌজদারি অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

ব্যারিস্টার তুরিনের কী ধরনের শাস্তি হতে পারে জানতে চাইলে মালুম বলেন, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ আনা হবে। তার কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রবিরোধিতার শামিল। কারণ, এটি রাষ্ট্রের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি প্রতিষ্ঠান। এখন আইন মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে সেটি তাদের দায়িত্ব।

Advertisement

প্রসিকিউটর মালুম বলেন, ‘প্রসিকিউশন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরও তুরিন আফরোজ প্রসিকিউটরদের বরাদ্দকৃত বেতন-ভাতা নিয়মিত গ্রহণ করেছেন। গত মাস পর্যন্তও গ্রহণ করেন। একইভাবে সরকারি গাড়ি, গানম্যান, প্রটেকশন প্রটোকল পেয়ে আসছিলেন এবং তার বাড়িতে হোম গার্ডও পেয়ে আসছিলেন। আজ অপসারণের ফলে তাৎক্ষণিকভাবেই সব সুযোগ-সুবিধাও বাতিল হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রসিকিউশনের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার কাছে বিভিন্ন মামলার দলিলপত্র, বিশেষ করে ওয়াহিদুল হকের মামলায় যে পর্যন্ত তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন, সে সময় পর্যন্ত নথিপত্র ও তদন্ত প্রতিবেদনের অংশ রয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত সেসব তিনি জমা দেননি। আশা করি, নৈতিক দায়িত্ব অনুভব করে এগুলো তিনি জমা দেবেন।’

এর আগে পেশাগত অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০১৬ সালে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে প্রসিকিউশন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। তবে তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। তিনিও নিয়মিত বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন বলে জানান প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।

নিজের অপসারণের বিষয়ে তুরিন আফরোজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, শতভাগ সততার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। এমনকি আমার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্তে কোনো কমিটি করা হয়েছে কি না সেটিও জানি না। আমার বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘কারা, কীভাবে তদন্ত করে প্রমাণ পেল তা আমি জানি না। আমারও কিছু বক্তব্য আছে, সেটি কেউ শুনলো না। সেদিন কী ঘটেছিল, আরও কেউ জড়িত আছে কি না সেটিও জানতে চাইলো না। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ন্যাচারাল জাস্টিসের বিরুদ্ধে। তারপরও আমি ট্রাইব্যুনালের মর্যাদা নষ্ট হোক সেটি চাই না। বিষয়গুলো সুযোগ পেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলব।’

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক ডিজি মেজর (অব.) ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগে গত বছরের ৯ মে তাকে ট্রাইব্যুনালের সব কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর। এরপর তার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়।

ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় প্রায় ১৮ মাস তদন্ত সম্পন্ন করে তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সোমবার (১১ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণে আদেশ জারি করা হয়।

এফএইচ/আরএস/এমএস