ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় ৪ থেকে ৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘গাছ চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন ২ জন।’
Advertisement
রোববার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুনতে পারলাম গড়ে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ৪০ থেকে ৯০ কিলোমিটার, এটা খুবই কম। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি এবার সেই রকম কিছু হয়নি।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে আমরা সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলাম। ৫ হাজার ৫৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জনকে আমরা সফলভাবে সরিয়ে নিতে পেরেছি। নিরাপত্তা দিতে পেরেছি।’
Advertisement
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই পর্যন্ত হতাহতের খবর খুব বেশি পাওয়া যায়নি। আমরা অফিসিয়ালি ২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছি। সংবাদ মাধ্যমে চারজনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। আর ৩০ জনের মতো আহত হয়েছে। চার থেকে ৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এটাই ছিল আমাদের ক্ষয়ক্ষতির খবর।’
তিনি বলেন, ‘নিহত দুজনের মধ্যে একজন প্রমীলা মণ্ডল (৫২), তার বাড়ি খুলনার দাকোপে। তিনি বিনা অনুমতিকে আশ্রয় কেন্দ্র ত্যাগ করে নিজের বাড়িতে যাওয়ার পর রান্নাঘরে গাছচাপা পড়ে মারা গেছেন আজ সকালে। আরেকজন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে মারা গেছেন, তার নাম হামিদ কাজী (৬৫), তিনিও ঘরের ওপর গাছ পড়ে মারা গেছেন।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল জানান, বাগেরহাটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একজনের মারা যাওয়ার কথা বলা হলেও বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জানিয়েছেন তিনি মারা যাননি। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শাহ কামাল আরও বলেন, বাগেরহাটের মিঠাখালিতে একটি মেয়ে বাচ্চা জন্মগ্রহণ করেছে। তার নাম রাখা রাখা হয়েছে ‘বুলবুলি’।
Advertisement
দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ‘ডি-ফরম’ রয়েছে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এটা (ডিসিদের কাছ থেকে) আসতে মিনিমাম সাতদিন সময় লাগবে। কিন্তু আনুমানিক হিসাব সেই অনুযায়ী তারা (ডিসি) বলেছে চার-পাঁচ হাজার (ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি) হতে পারে, সবগুলো কাঁচাঘর।’
চার নম্বর সতর্ক সংকেতের সময় বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর ১৪ জেলায় ৫০০ টন করে চাল, ১৫ লাখ করে টাকা এবং প্রত্যেক জেলায় ২ হাজার প্যাকেট করে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেনাবাহিনী প্রতিটি উপদ্রুত অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। প্রচুর খাবার, ওষুধপত্র ও মানবিক সহায়তা নিয়ে তারাও প্রস্তুত আছে।’
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। তিনি ঘণ্টায় ঘণ্টায় আমাদের কন্ট্রোল রুমে ফোন করেছেন। আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনেছেন। মাঠপর্যায়ে আমাদের কতটুকু অগ্রগতি সেটার খবর নিয়েছেন। সুদীর্ঘ রাজনীতি ও সরকার পরিচালনা থেকে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা নির্দেশনা পেয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছি, উৎসাহিত হয়েছি, আমরা শক্তি পেয়েছি, আমরা জনগণের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছি’ বলেন এনামুর রহমান।
ঘূর্ণিঝড়ের পর পুনর্বাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো দুর্যোগে মোকাবিলায় স্থায়ী কার্যাদেশ বা এসওডি আছে। সেখানে নির্দেশনা দেয়া আছে দুর্যোগ সরে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে স্থানগুলো পরিদর্শন করতে হবে। সেই অনুযায়ী আগামীকাল হেলিকপ্টারযোগে আমরা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করব। এরপরও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট আসা শুরু হয়েছে, সেখান থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকে যার যার মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও পুনর্বাসনের জন্য সুপারিশ ও নির্দেশনা দেব।’
তিনি বলেন, ‘১৪ জেলার কোথাও আমন নেই, শুধু পটুয়াখালীতে কিছু আমন আছে। আমন ধান পানির মধ্যে বাড়ে, তাই সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। শীতের সবজি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটা কৃষি মন্ত্রণালয় আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সদস্য। তারা নিরূপণ করে, তাদের বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ, চারা সরবরাহ করে তাদের পুনর্বাসিত করার জন্য কাজ করা হবে।’
সুন্দরবনের কারণে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ দুর্বল হয়ে গেছে, সুন্দরবনকে আরও শক্তিশালী করা হবে কিনা- এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সুন্দরবনটা সবুজ বেষ্টনি হিসেবে কাজ করে। আমরা অনেক অভিযোগ শুনি এটার প্রতি অনেক অত্যাচার হয়। সরকার হিসেবে আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি- আমরা এর সকল প্রকার অব্যবস্থাপনা দূর করে গাছ লাগিয়ে, প্রতিরক্ষা দেয়ার মতো সক্ষমতা বাড়ে, সুন্দরবনের যাতে আরও যত্ন নিতে পারি সেদিকে আমরা সচেষ্ট হব।’
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম, আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এসএইচএস/এমএস