‘মাথা গোঁজার শেষ সম্বল ছিল ঘরটি। সে ঘরটিও এখন নেই। থাকবো কোথায় আর যাব কোথায় জানি না। ঘরে এক টাকাও নেই। মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’ কেঁদে কেঁদে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামের বিলকিস বেগম জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন।
Advertisement
তিনি বলেন, আমার স্বামী মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি ঘর থেকে বের হতে পারেন না। তিন মেয়ে সন্তান। এই ঘরটুকু ছাড়া কিছুই নেই আমার। সেলাইয়ের কাজ করে যে টাকা রোজগার হয় তা দিয়েই সংসার চলে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে শেষ আশ্রয়টুকুও কেড়ে নিল। এখন কি করবো, অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কোথায় থাকবো জানি না।
বিলকিস বেগম আরও বলেন, ঘরে একটি টাকাও নেই। খাবার কিছুই নেয়। বেড়ার ঘরটি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাষক ইদ্রিস আলী জানান, ভোররাতে শুরু হওয়া ঝড়ের কবলে পড়ে এলাকার বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। মানুষের মাঝে হাহাকার পড়ে গেছে। বিলকিস বেগমের সম্পদ বলতে শুধু এই ঘরটুকুই ছিল। সেটুকুও তার অবশিষ্ট নেই।
Advertisement
অন্যদিকে গাবুরা, বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের অবস্থাও করুণ। এই দুই ইউনিয়নের মাটির ও টিনের তৈরি একটি ঘরবাড়িও অবশিষ্ট নেই। সবগুলোই বিধ্বস্ত হয়েছে।
স্থানীয় গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম ও বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, এক কথায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। রাস্তায় গাছ উপড়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। মাটির ঘরবাড়ি সব বিধ্বস্ত।
সাতক্ষীরা জেলা কন্ট্রোল রুমের তত্ত্বাবধায়ক ও জেলা ডিআরআরও প্রশান্ত কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, ধীরে ধীরে আবহাওয়া শান্ত হচ্ছে। উপকূলবর্তী এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়াবে সরকার। রাস্তায় গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এখনও উপকূলবর্তী মানুষদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে আমরা ইতোমধ্যে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির তালিকা করেছি।
তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৫০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৬৬ হাজার ৬৬০টি ঘর ও সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৫৮০টি ঘরবাড়ি। এসব মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
Advertisement
আকরামুল ইসলাম/আরএআর/এমএস