ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। শনিবার থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে বলা হয়, ৭ নভেম্বর হতে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় ও ত্রাণ তৎপরতা মনিটরিং সেল’ সার্বক্ষণিক সচল করা হয়েছে।
Advertisement
এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের অনুরোধে যশোর থেকে সেনাবাহিনীর ১২০ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী ও চিকিৎসা দল প্রয়োজনীয় যানবাহন নিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অবস্থান করছে। তারা প্রাথমিকভাবে স্থানীয় জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরে সহায়তা করেন।
জাগো নিউজের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, শনিবার (৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে দর্যোগ পরবর্তী সময়ে সেনা সদস্যের তৎপরতা ও কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সেনাবাহিনীর মেজর তানজির হোসেন জানান, সরকারের নির্দেশনায় আমরা এখানে দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে মানুষদের জন্য কাজ করতে এসেছি। আপনারা যেভাবে চাইবেন আমরা সেভাবেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব।
বৈঠকে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম কামরুজ্জামান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আতাউল হক দোলন বলেন, সেনাবাহিনীর একটি দল শ্যামনগর উপজেলা সদরের মহসিন কলেজে অবস্থান করছে। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে কীভাবে উদ্ধার তৎপরতাসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়, সে বিষয়ে জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমরা কী ধরনের সহযোগিতা তাদের কাছে চাই। আমরা তাদের একটা ধারণা দিয়েছি, কী কী ধরনের প্রয়োজন হতে পারে। প্রয়োজন হলেই তাদের জানানো মাত্রই তারা তৎপরতা শুরু করবেন।
Advertisement
আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনীর সকল ফরমেশন কর্তৃক স্থানীয় সিভিল প্রশাসনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে এবং যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তা করার জন্য বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী সদস্যরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রয়োজনীয় উদ্ধারসামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তার জন্য ঔষধসামগ্রী, খাবার পানি, শুকনো খাবার জরুরি প্রয়োজনে বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজ (বিএনএস কর্ণফুলী, তিস্তা, পদ্মা ও এলসিভিপি ০১১, ০১৩) দুর্যোগ পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চারটি কন্টিনজেন্ট ও অনেকগুলো চিকিৎসা সহায়তাকারী দল মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া নৌবাহিনী তিন স্তর বিশিষ্ট উদ্ধার তৎপরতা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। একই সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছে।
এছাড়া জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলে ১০০ জন সদস্যের কন্টিনজেন্ট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ কিছুটা দুর্বল হয়ে শনিবার (৯ নভেম্বর) রাত ৯টা নাগাদ সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। রোববার ভোর নাগাদ সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে এটি।
শনিবার রাত ১১টায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিনে (২৭ নম্বর) এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।
Advertisement
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এমএআর/এমএসএইচ