১০ বছরের ব্যবধান। এর আগে ২০০৯-এর ২৫ মে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে একযোগে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আইলা। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিবেগের ঘূর্ণিঝড় এবং তার সঙ্গে বিশাল জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ভেঙে পড়েছিল অসংখ্য গাছপালা। অনেকে মনে করেছিল, আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না সুন্দরবন। কিন্তু সে ভুল ভেঙে দিয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি খ্যাত, নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন।
Advertisement
ওই ঝড়ে কেবল বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে ৩৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছিল। প্রায় ১০ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল। কয়েক লাখ বাড়িঘর জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায়।
শনিবার রাতে আবারও তেমনই একটি অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। এর নাম রাখা হয়েছে ‘বুলবুল’। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতি থাকবে আইলার মতোই, ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বা তারও বেশি।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, প্রবল বেগে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলে আঘাত করবে। মূলত খুলনার সুন্দরবন অংশের কাছে আঘাতটা আসবে। আইলার মতো এবারও সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Advertisement
‘আজ সন্ধ্যায় সুন্দরবন নিকট দিয়ে বুলবুল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে প্রবেশ করবে। এ ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সুন্দরবন একটা বাধা বলতে পারেন। এটা হয়তো অনেকটাই রক্ষা করবে। যেহেতু এটা প্রবল ঘূর্ণিঝড়, তারপরও ওই রকম (আইলার মতো) ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ ‘বুলবুল কমপক্ষে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত করতে পারে। উপকূল অতিক্রম করতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগবে’- বলেন তিনি। এরপর উপকূল অংশ পেরিয়ে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করবে। এরপর তা বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা অঞ্চল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার বিকাল ৪/৫টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা সারাদেশেই এর প্রভাব থাকবে। তবে রংপুর বিভাগে এর বিস্তার তুলনামূলক কম থাকতে পারে- বলেন এ আবহাওয়াবিদ।
ইতোমধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
এ ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আজ দুপুর থেকে দমকা হাওয়া শুরু হতে পারে।
Advertisement
৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে
বুলবুলের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার বা তার বেশি থাকতে পারে। সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম করা শুরু করলে, ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে এটা উপকূল অতিক্রম করে যাবে। এরপর এটি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে।
এতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে এবং ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। এর প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী উড়িষ্যা অঞ্চলে যেমন ক্ষয়ক্ষতি করেছিল বা প্রভাব ফেলেছিল, আমাদের উপকূলে বুলবুলের কারণে সেরকম প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে কি-না? জবাবে আবহাওয়াবিদ এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘এটা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে প্রবেশ করবে। এ ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সুন্দরবন একটা বাধা বলতে পারেন। এটা হয়তো অনেকটাই রক্ষা করবে। যেহেতু এটা প্রবল ঘূর্ণিঝড়, তারপরও ওই রকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
১৮ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে
শনিবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ঝুঁকিতে থাকা ১৮ লাখ মানুষকে শনিবার দিনের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেবে সরকার। অতি ঝুঁকিপূর্ণ নয় জেলায় চার হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
পিডি/এমএআর/এমএস