সৌদি আরবে পাশবিক নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে তার কর্মস্থল থেকে উদ্ধার করে দেশটির নাজরান সেফ হোমে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি সৌদি প্রবাসী সুমির ফেসবুক লাইভের এক ভিডিও ভাইরাল হয়। তাতে আহাজারি করে বলেন, ‘আমি বাঁচতে চাই, হায়েনার দল আমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বাঁচান।
Advertisement
এ বিষয়ে জেদ্দা কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, সুমির ভিডিওটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করার প্রক্রিয়া শুরু করি। গৃহকর্মী সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের ‘মুসানাত’ মাধ্যমে জানতে পারি মেয়েটি রিয়াদের আশপাশে অবস্থান করছে। সৌদি পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে নাজরানে সেফ হোমে রাখা হয়েছে।
জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তা বলেন, সুমিকে থানায় নিয়ে আসা হলেও কফিল তাকে ছাড়তে চাচ্ছিল না। তিনি সুমিকে আরও রাখতে চান। সুমিকে ছাড়তে হলে যারা বাংলাদেশ থেকে মধ্যস্থতা করে (রূপসী বাংলা ওভারসিজ) তাকে সেখানে পাঠিয়েছে, তাদের কাছ থেকে সৌদির কফিলকে অর্থ আদায় করে দিতে হবে।
কফিলের ভাষ্য, সৌদিতে সুমিকে আনতে তার প্রায় ২২০০০ রিয়াল খরচ হয়েছে, এই টাকা সেবায় শোধ হয়নি। পরে দূতাবাসের সহযোগিতায় সুমিকে নাজরান সেফ হোমে রাখা হয়েছে।
Advertisement
সুমি আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। সুমির আকুতির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর স্বামী নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছুদিন থাকলে আমি মরে যাব।’
সুমির পরিবার জানায়, ২০১৬ সালে নুরুল ইসলাম সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন। সুমি পঞ্চগড় জেলার বোদা সদর থানার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামী আগেও বিয়ে করেছেন। বাধ্য হয়ে সুমি সতীনের সংসার শুরু করেন।
বিয়ের দেড় বছর পর সুমির এক সন্তান হয়। সতীনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানকে মানুষ করার জন্য বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুমি। এজন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন তিনি।
Advertisement
তখন বিনামূল্যে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সেটি হাতছাড়া করতে চাননি সুমি। দালালদের দেখানো লোভ আর বিদেশে গিয়ে ভালো টাকা আয়ের আশ্বাসে বিনামূল্যে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে পাড়ি জমান নিম্নবিত্ত ঘরের এই গৃহবধূ।
কিন্তু দালালরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে যে বিক্রি করে দিয়েছে সে কথা জানতেন না সুমি। সৌদি যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে শুরু হয় তার ওপর মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন।
জানা গেছে, সুমি গত রমজানে গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরবের রিয়াদে আসেন। পরে তাকে কফিলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে তার উপর অত্যাচার শুরু হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে ফেসবুক লাইভে বাঁচার আকুতি জানান এ বাংলাদেশি কর্মী।
এ ব্যাপারে সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পর পরই তার ওপর নানাভাবে নির্যাতন চলে। আমার সঙ্গে মাঝে যোগাযোগ করতে দেইনি। এরপর যখনই আমার সঙ্গে কথা হয় তখনই সুমি বাড়ি আসতে চায়। সে আর সৌদিতে থাকতে চায় না।
তিনি বলেন, আমি গত ১১ অক্টোবর পল্টন থানায় ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’র মালিক আক্তার হোসেনের নামে সাধারণ ডাইরি (জিডি) করেছি। এ ছাড়া ন্যায়বিচারের জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান রফতানি ব্যুরোর মহাপরিচালকের দফতরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
পল্টন থানার এসআই রাজিউর বলেন, সৌদি প্রবাসে এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামী নুরুল ইসলাম এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পরবর্তীকালে আমি তাকে মামলা করতে পরামর্শ দিয়েছি। এ ঘটনায় মামলার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে তোলপাড় হলেও টনক নড়েনি ওভারসিজ প্রতিষ্ঠানগুলোর। রাজধানী ঢাকার অলিতে-গলিতে গড়ে উঠেছে আদম ব্যবসায়ীদের অফিস, সাব-অফিস। অসহায়দের নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠানোর নামে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এমআরএম/এমকেএইচ