বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৌ-সেক্টর পরিচালিত সফলতম গেরিলা অপারেশন ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এ দুঃসাহসী আত্মঘাতী অপারেশনের সঙ্গী ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল। মূল অভিযানে অংশ নেয়া নৌ-কমান্ডোদের তিনি ও তার সঙ্গীরা সে সময় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।
Advertisement
মঈন উদ্দীন খান বাদল আর নেই। বৃহস্পতিবার ভোরে ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথা বাংলাদেশের মানুষের মনে থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর বর্ণনা দিয়ে নিজের লেখা ‘অপারেশন জ্যাকপট : চট্টগ্রাম’ বইয়ে মঈন উদ্দীন খান বাদল লিখেছিলেন, ‘এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ‘অপারেশন জ্যাকপট’ চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ-কমান্ডোদের সার্থক অপারেশন মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য বাঙ্গালি জাতির যুদ্ধ জয়ের পথে নতুন গতি পথের সন্ধান দিয়েছিল। আমি মুক্তিযোদ্ধা। চট্টগ্রাম শহর আমার যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধের একজন সক্রিয় গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে নিজের সম্পৃক্ততার কারণে কর্ণফুলী নদীতে আত্মঘাতী নৌ-কমান্ডোদের প্রথম অপারেশন ‘অপারেশন জ্যাকপট’ এ সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে গিয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় যদি এটাকে মুক্তিযুদ্ধের একক বৃহত্তম সফল অপারেশন বললে অতুক্তি হবে না।’
জীবন বাজি রেখে যুদ্ধের সেই সময়ের কথা জানাতে গিয়ে তিনি লেখেন, ‘আক্ষরিক অর্থে এটা ছিল একটি আত্মঘাতী অপারেশন। নৌ-কমান্ডোরা সেচ্ছামৃত্যু অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছিলেন।... অপারেশন পন্ড হওয়ার জন্য একজন নৌ-কমান্ডো বা একটি লিমপেট মাইন কিংবা সহযোগী স্থানীয় একজন গেরিলাও ধরা পড়া যথেষ্ট ছিল।... আমরা হয়তো একজন গেরিলা ধরা পড়তাম বা মারা যেতাম, কিন্তু মানুষ যারা কমান্ডোদের আশ্রয় দিয়েছিল তাদের সমস্ত পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।’
Advertisement
শুধু অপারেশন জ্যাকপট নয়, এই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতাও।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রাম, মংলা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ বন্দরে একযোগে চালানো অভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’ ছিল মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নৌ-কমান্ডোদের প্রথম অপারেশন।
২০১৫ সালে নৌ-কমান্ডোদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মঈন উদ্দীন খান বাদল
মুক্তিযোদ্ধারা জানতেন, তাদের এই অভিযান সফল হলে বাঙালি জাতিকে তা এগিয়ে নেবে বিজয়ের বন্দরের পথে। আর ব্যর্থতার ফল হবে মৃত্যু। এ কারণে লিম্পেট মাইন নিয়ে মরণপণ সেই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’।
Advertisement
২০১৫ সালে মঈন উদ্দীন খান বাদলের নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী চ্যানেলে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসে অংশ নেয়া অপারেশন জ্যাকপটের নৌ-কমান্ডোদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
ওই অভিযান সফল করতে ভূমিকা রাখা ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং কমান্ডোদের আশ্রয় দেয়া চারটি বাড়ির মালিককে বন্দর নগরীর একটি হোটেলে সে সময় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললেও তাদের জন্য এ ধরনের নাগরিক আয়োজন সেটাই প্রথম।
ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও মঈন উদ্দীন খান বাদলের ভূমিকা ছিল।
আবু আজাদ/এমএসএইচ/জেআইএম