বাংলাদেশে আট লক্ষাধিক টিউবওয়েল আছে। যার ৬০ শতাংশ আর্সেনিকযুক্ত। গ্রামে বসবাস করা ৯৭ শতাংশ লোক এসব টিউবওয়েল থেকে পানি পান করছে এবং গৃহস্থালিসহ প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার কছেন, যা আক্রান্ত এলাকার মানুষের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর একটা বার্তা দিচ্ছে।
Advertisement
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন জাপানের টুকুশিমা বুরনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেইসিরো হিমনু। এক দশক ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ হোসেনের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের আর্সেনিক সমস্যা নিয়ে গবেষণা করছেন অধ্যাপক সেইসিরো হিমনু।
সেইসিরো হিমনু বলেন, গত এক দশকে আমরা ১২টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে আমরা দেখতে পেয়েছি শরীরে আর্সেনিকের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশকিছু রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। তার মধ্যে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অথেরোস্ক্লেরোসিস, ক্যানসার, স্কিনের সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ইনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্স ল্যাবে চলে আমাদের গবেষণা।
সম্প্রতি Dose-dependent relationship between chronic arsenic exposure and cognitive impairment and serum brain derived neurotrophic factor নামের প্রায় ৮ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তাদের এই গবেষণা বলছে, আর্সেনিক মানুষের জ্ঞান ধারণের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
Advertisement
সেইসিরো হিমনু বলেন, বাংলাদেশে গত প্রায় ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে এই সমস্যাটা আছে। আক্রান্ত এলাকার মানুষের ভোগান্তি কম নয়। ওই এলাকার মানুষ যখন হার্টের সমস্যা, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। ডাক্তাররা স্বাভাবিক নিয়মে বলে দিচ্ছেন এটা ধূমপান বা অন্য কোনো কারণে হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো ডাক্তাররা বুঝতে পারছেন না এটি আর্সেনিকের প্রভাবেও হওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, শরীরে যখন কম পরিমাণে আর্সেনিক থাকছে তখন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। ধীরে ধীরে চামড়ার সমস্যা দেখা যায়। এটি যখন স্থায়ী হয় এবং আর্সেনিকের পরিমাণ বাড়ে তখন ব্লাক ফুটসহ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
বাংলাদেশে আর্সেনিকের ভবিষ্যত নিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, এখন সময় এসেছে বাংলাদেশ থেকে এই সমস্যা প্রতিরোধে উদ্যোগ নেয়ার। এজন্য প্রাথমিকভাবে আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকা ও আর্সেনিক আক্রান্ত লোকেদের রেজিস্ট্রেশনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে টিউবওয়েলগুলোতে ফিল্টার স্থাপনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে এটি সহজ নয়, জাপানের মতো দেশ এই উদ্যোগ নিতে এখনো পারেনি। তবে চিলি আর্সেনিক প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পেরেছে।
সালমান শাকিল/এএম/জেআইএম
Advertisement