জাতীয়

সংসদ ভবন ঘুরে দেখানোর জন্য নিয়োগ হচ্ছে গাইড

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লুই আই কানের অনন্য স্থাপনা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। স্থাপত্যের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘মাস্টার পিস’। এটি বিশ্বের সেরা কয়েকটি স্থাপনার একটি হলেও যারা সেখানে যান তাদের জন্য কোনো গাইড নেই। অনেক সময় সেখানে কর্মরত কর্মকর্তারাই গাইড হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু সংসদ দর্শনার্থী ও বিদেশি অতিথিদের জন্য গাইড নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংসদের সাবেক কর্মকর্তাদের এ কাজে লাগানোর চিন্তা করা হচ্ছে। সংসদ সচিবালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

Advertisement

সূত্র জানায়, সম্প্রতি সংসদ সচিবালয়ের ইন্টার পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্সের (আইপিএ) অনুবিভাগের মাসভিত্তিক তৃতীয় সমন্বয় সভায় বিষয়টি উঠে আসে। সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমদ খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে অতিরিক্ত সচিব (আইপিএ) বলেন, সম্প্রতি ‘ভিজিট নীতিমালা-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে ‘গাইড’ নিয়োজিত করা প্রয়োজন। ‘গাইড’ এর তালিকা প্রস্তুতকরণের জন্য ইচ্ছুকদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ তৈরির কথা বলা হয়।

এরপর সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস প্রস্তাব করেন, গাইড হিসেবে সংসদের রিটায়ার্ড ব্যক্তিদেরও পার্ট টাইম বেসিসে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। কারণ তারা সংসদ সম্পর্কে অনেক জানেন। এছাড়া বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে গাইড হিসেবে নির্দিষ্ট দিনে দায়িত্ব পালনের জন্য একটি প্যানেল তৈরি করা যেতে পারে।

Advertisement

সিনিয়র সচিব এটি সমর্থন করে বলেন, রিটায়ার্ড ব্যক্তিদের নিয়োগ দিলে ভালো হবে, দায়িত্বও থাকবে। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আপাতত প্রতি উইং থেকে গাইড হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক এমন একজন করে নিয়োজিত করতে হবে এবং তা অতিরিক্ত সচিব (আইপিএ) তদারকি করবেন।

উপসচিব (আইপিএ) বেগম লাবণ্য আহমেদ বলেন, গাইড হিসেবে কাজ করার আগ্রহ যাদের আছে তাদের কাজটি দিলে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজটি করতে পারবে। তিনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় শুদ্ধ উচ্চারণে গাইডদের ভাষ্য প্রদানের দক্ষতার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সংসদে গাইড নিয়োগ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমরা সংসদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবছি।

সূত্র জানায়, সংসদ এলাকায় আগত গৃহশিক্ষক, গৃহকর্মী এবং ড্রাইভারদের স্থায়ী ঠিকানায় অবস্থিত স্ব-স্ব থানা থেকে ফৌজদারি মামলা এবং স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কিত প্রত্যায়নপত্র জমাদান সাপেক্ষে অস্থায়ী পাসের ব্যবস্থা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

Advertisement

বৈঠকে জানানো হয়, সংসদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ‘হাই প্রোফাইল ভিজিট’ এর ক্ষেত্রে অনেক সময় কম সময় পাওয়া যায়। এতে করে নথি প্রক্রিয়াধীন থাকে বলে ভিজিটরদের কোনো চিঠি বা নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয় না। তাই দেখা যায় অনেক দর্শনার্থী মোবাইল-ক্যামেরা নিয়ে সংসদ আসেন যা সংসদ সচিবালয়ের নীতিমালায় পড়ে না। এক্ষেত্রে নথি প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় সিনিয়র সচিবের মৌখিক অনুমোদন নিয়ে দর্শনার্থীদের চিঠি ও নির্দেশনা প্রেরণ করার প্রস্তাব করা হয়। সিনিয়র সচিব এ ধরনের দর্শনার্থীদের ক্ষেত্রে ই-মেইলে নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

কমিটি অফিসার মো. আরিফ বলেন, হাই প্রোফাইল ভিজিটর ছাড়াও নিয়মিত ভিজিটরের ক্ষেত্রেও প্রায়ই দেখা যায় মাননীয় স্পিকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় ভিজিটটি সম্পন্ন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কমন ও সমন্বয়সহ অনেক শাখায়ই চিঠি ইস্যু করা যায় না বিধায় সমন্বয়ের ঘাটতি থাকে। এসব ক্ষেত্রেও সিনিয়র সচিবের অনুমোদন নিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় চিঠি ইস্যু করা গেলে ভিজিট সুন্দরভাবে করা যায়। সিনিয়র সচিব এতে সম্মতি প্রদান করনে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টগণের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা দেন।

এ বিষয়ে সিকিউরিটি পারচেজের সিনিয়র সচিব বলেন, সংশ্লিষ্ট উইংকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন নোটে যোগাযোগের মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ না করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে নেয়। কারণ অনেক সময় কথা বলার মাধ্যমেও কার্যসম্পাদন সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে তিনি সহকর্মীদের সকলের কো-রিলেশন ভালো করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। কারণ সংসদ সচিবালয়ে ১১১টি সেকশন আছে যার কাজ অন্য মন্ত্রণালয়ের চেয়েও অনেক বেশি। এ জন্য সমন্বয়ের একটু সমস্যা হতেই পারে। তাই এক্ষেত্রে একসঙ্গে বসতে আমরা যেন দ্বিধাবোধ না করি এবং সবসময় চিঠিপত্রের জন্য অপেক্ষা না করি। এটি হলে আমাদের মাঝে হৃদ্যতা ও কাজের গতি বাড়বে।

সভায় লাবণ্য আহমেদ আরও বলেন, জাতীয় সংসদে একটি স্যুভেনির শপ ছিল। এটি পুনরায় চালু হলে তা সংসদের একটি আয়ের উৎস হতে পারে। বাইরের দেশে ভিজিটে দেখা যায় রুট অনুযায়ী সব জায়গা ঘুরিয়ে স্যুভেনির শপে এনে কেনা কাটার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, অনেক সুপারশপে সংসদ ভবন, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনারের রেপ্লিকা থাকে সেগুলো চায়না থেকে আনা এবং এগুলোর চাহিদাও ভালো। আমাদের জিনিস অন্য জায়গায় বিক্রি হচ্ছে কিন্তু আমরা তা করতে পারছি না। এগুলো উপহার হিসেবেও বেশ ভালো। জাতীয় সংসদের স্যুভেনির শপটি কেন বন্ধ হলো তা তিনি দেখতে বলেন এবং এটি পুনরায় নতুন আঙিকে চালু করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন ও সম্প্রতি সফরে যাওয়া উগান্ডার কিছু ছবি সবাইকে দেখান।

এইচএস/বিএ/পিআর