সাঈদ রহমান একজন তরুণ উদ্যোক্তা। তিনি একাধারে একজন প্রশিক্ষক ও লেখক। নিজের ডিজিটাল কমার্স ব্যবসার পাশাপাশি দেশের ই-কমার্সের উন্নয়নে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। ই-ক্যাবের ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছেন পুরস্কার। সফল এ উদ্যোক্তা মুখোমুখি হয়েছেন জাগো নিউজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
Advertisement
আমরা জানি, আপনি দীর্ঘদিন ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং অন্যান্য ডিজিটাল সেবা নিয়ে কাজ করছেন। আপনার কেন মনে হয়েছে যে, আগামী দিনে ই-কমার্স ব্যবসা প্রসারিত হবে?সাঈদ রহমান: দেখুন প্রত্যেকটি বিভাগে মান্দাতার আমলের পদ্ধতির জায়গায় ইলেক্ট্রনিক্স পদ্ধতি স্থান করে নিচ্ছে। আপনি দেখবেন যে, এখন ব্যাংক বলতে গেলে ই-ব্যাংক, পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট সব। এমনকি আপনি দেখবেন, স্কুল-হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা সবই প্রযুক্তির আওতায় চলে এসেছে। সুতরাং ব্যবসা-বাণিজ্য সবই ডিজিটাল ফরম্যাটে হবে এটাই স্বাভাবিক। শুধু নতুন ই-কমার্স উদ্যোগ আসছে তা কিন্তু নয়। প্রচলিত প্রক্রিয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইনে ক্রয় বা সেবা চালু করছে এবং করবে। এটি প্রযুক্তির জোয়ারে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফল। যা অবধারিত এবং অনিবার্য।
আপনি ঠিকই বলেছেন, সবকিছুই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আমরাও দেখতে পাচ্ছি, দিন দিন ই-কমার্স শহর থেকে গ্রামেও প্রসারিত হচ্ছে। আপনার কাছে জানতে চাইব, এই যে ই-কমার্স তথা প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়ের কারণে দেশের কর্মসংস্থান সেক্টরে কী ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?সাঈদ রহমান: কোনো সন্দেহ নেই যে, সেটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেমন ধরুন যদি গার্মেন্টস শিল্পে আপনি নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেন; সেখানে হয়তো শ্রমিকের প্রয়োজন কমে যেতে পারে। কিন্তু ট্রেডিং সেক্টর আলাদা। এটা প্রোডাকশন সেক্টরের মতো নয়। এখানে একটি প্রচলিত দোকানে যে ধরনের কাজ করা দরকার হয় তার সবই করতে হয়। বাড়তি কাজ থাকে ওয়েবসাইট, পেজ ব্যবস্থাপনা এবং অনলাইন প্রচারণা। সেজন্য বাড়তি আইটি স্কিল সম্পন্ন লোকবলের প্রয়োজন হয়। আর নতুন প্রজন্মের তরুণদের রয়েছে এক্ষেত্রে কাজ করার বিশাল সুযোগ। এটা এমন একটা মাধ্যম, যার মধ্যদিয়ে একজন গ্রামীণ উদ্যোক্তাও কোনো মধ্যসত্ত্বভোগী ছাড়াই ছোট একটা উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসা করতে পারে।
ট্রান্সফরমেশন অব বিজনেস টু ই-বিজনেস বইটি মূলত কাদের জন্য লেখা? সাঈদ রহমান: বইটি মূলত দুই ধরনের লোকজনের জন্য লেখা। প্রথমত, যারা তাদের প্রচলিত ব্যবসার পাশাপাশি অনলাইনেও নিজের পণ্য ও সেবার পসরা সাজাতে চান। তাদের জন্য বইটিকে ধারাবাহিক দিক নির্দেশনা রয়েছে। অন্যদিকে, যারা ই-কমার্সের সাথে জড়িত কিন্তু পরিকল্পনা করে ই-কমার্স বিজনেস করতে পারছেন না বা করছেন না। তাদেরও এটা কাজে লাগবে। মূলত ই-কমার্স ব্যবসাটাই তরুণদের ব্যবসা। তরুণদের কাছে আমার পরামর্শ থাকবে। এ ব্যবসায় তারা অবশ্যই আসবে, তবে সেটা কোনো হুজুগে বা কারো প্ররোচনায় নয়। নিজের ভালোবাসায় এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। লেগে থাকলে সফলতা আসবে।
Advertisement
আপনার প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল হাব সলিউশন্স লিমিটেড নিয়ে কিছু বলুন— সাঈদ রহমান: আমরা মূলত ই-কমার্স সাপোর্ট ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করি। মানসম্পন্ন ওয়েবসাইট তৈরি, তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, বড় ই-কমার্স হাউসের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং কনটেন্ট তৈরি নিয়ে কাজ করি। আমরা দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য কাজ করছি। আমাদের ঢাকায় দু’টি অফিসে দু’টি টিম এসব কাজ করে থাকে।
প্রতিবছর আমাদের দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত যুবক বের হয়। যারা দক্ষতার অভাবে বেকার থেকে যায়। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আসা লোকেরা সে জায়গা দখল করে। যদি ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি আরও বড় হয়, তাহলে গার্মেন্টস ও ব্যাংকিং সেক্টরের মতো এখানেও কি এরকম হবে যে, দেখা গেল আমরা বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মী এনে ই-কমার্স চালাচ্ছি?সাঈদ রহমান: দেখুন, কোনো কিছুই একদিনে গড়ে ওঠে না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে বড় হচ্ছে; সেভাবে ম্যান পাওয়ার তৈরি করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে হাজার হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর পাশাপাশি আমি মনে করি, ই-কমার্স বিষয়টাকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে পাঠ্যসূচিভুক্ত করা দরকার। প্রশিক্ষণগুলোকে আরও উচ্চতর ও সমৃদ্ধ করা দরকার। শুধু সরকারের আশা করে বসে থাকাও ঠিক নয়। আমাদের তরুণদের বুঝতে হবে, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, আজকাল কেউ কোনো কিছু শিখতে চাইলে হাজারও উপায় আছে। যা হয়তো ৩০ বছর আগে ছিল না। ই-কমার্স সংক্রান্ত বই তারা কিনে পড়তে পারে, তারা ইউটিউবে ভিডিও দেখতে পারে, গুগলে সার্চ দিয়ে বিভিন্ন লেখা পড়তে পারে। চাইলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার মাধ্যমেও শিখতে পারে। আমরা যদি নিজেকে তৈরি না করি। তাহলে সে শূন্যতায় অন্য কেউ এসে জায়গা করে নেবে- এটাই স্বাভাবিক।
আপনি নিশ্চয়ই জানেন, শহর পর্যায়ে যেভাবে ই-কমার্স ব্যাপৃত হয়েছে। গ্রামীণ পর্যায়ে ততটা নয়। অথচ আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। ই-কমার্সের সুফল যদি গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ভোগ করতে না পারে, তাহলে এর সার্থকতা আসতে সময় লাগবে বৈকি?সাঈদ রহমান: আপনি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের অবতারণা করেছেন। আমরা যদি গ্রামের মানুষদের বাদ দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করি, তাহলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই আমাদের উচিত হবে, তাদের এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা। আপনি জেনে থাকবেন, ইতোমধ্যে পোস্ট অফিসে ই-পোস্ট নামে আলাদা সেবা চালু করা হয়েছে অনলাইন উদ্যোক্তাদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সামনে আমাদের আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের উৎপাদিত পণ্যসমূহ শহরের ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ই-কমার্স হতে পারে একটি সময় উপযোগী মাধ্যম।
আমরা জানি, ই-ক্যাবের সাথে আপনি জড়িত। ই-ক্যাব এবং ই-কমার্স নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?সাঈদ রহমান: আমরা চাই তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতিভা নিয়ে কাজ করতে। দেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা এবং বিশাল তরুণশক্তিকে কাজে লাগানোর এখনই সময়। আপনি জানেন, ই-কমার্স এমন একটি ব্যবসা; যার মাধ্যমে আমরা দেশের পণ্যকে বিদেশি ভোক্তার কাছে নিয়ে যেতে পারি খুব সহজেই। তাই আমরা চাই, তারুণ্যভিত্তিক উদ্যোক্তা গোষ্ঠী তৈরি করে সেবাভিত্তিক ও উৎপাদনভিত্তিক ব্যবসার সমন্বয় করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সাথে এগিয়ে যেতে। কাজগুলো আমরা ই-ক্যাবের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি অংশগ্রহণের মাধ্যমে করতে চাই।
Advertisement
এসইউ/এমএস