প্রতিবারের ন্যায় এবারো সিউলের হসপিটাল বেডে চোখের জলে ভেসে ঈদ এসেছিল প্রবাসী বাংলাদেশি ইমরান হোসাইনের জীবনে। ঈদ-উল-ফিতরের পর আজ ঈদ-উল-আযহাও চলে গেল ঠিক একইভাবে অজানা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ঝুঁকি সামনে রেখে। কোরিয়ান শল্য চিকিৎসকের ‘রং ট্রিটমেন্ট’-এর শিকার হয়ে স্পাইনাল কর্ড ড্যামেজ হয়ে যায় এক সময়ের হাস্যোজ্জল এই প্রাণচঞ্চল যুবকের। পা থেকে কোমর হয়ে গলা অবধি প্যারালাইজড হয়ে টানা তিন তিনটি বছর ‘ক্লিনিক্যালি’ মৃত্যুর প্রহর গুণলেও মনের জোরে ইমরান আজো আশা করছেন আগেকার সেই সুন্দর দিনগুলোতে ফিরে যাবার। নিয়তির নির্মম পরিহাস, ভুল চিকিৎসার বিষয়টি সিউলেরই অন্য হাসপাতাল থেকে নিশ্চিত করা হলেও মহল বিশেষের উদাসীনতায় ন্যায়বিচারসহ প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ থেকেও বঞ্চিত রয়েছেন ইমরান আজ অবধি। ঢাকার গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে মার্চেন্ডাইজারের ভালো কাজ ছেড়ে ২০১২ সালে কোরিয়াতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইমরান হোসাইন। সিউলে প্রবাস জীবনের মাত্র একটি বছর না পেরুতেই কর্মস্থলে ওজন উঠাতে গিয়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাজনিত ‘ভুল অপারেশন’ ওলটপালট করে দেয় তার সব স্বপ্ন। ডাক্তারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই ‘আই-ওয়াশ’ মামলা হয় কুখ্যাত সংমো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করে। অসুস্থ ইমরানের ভাগ্যে জোটে সুবিধাবাদী কোরিয়ান উকিল। এক পর্যায়ে বদল হয় উকিল, আসে নতুন মুখ। কিন্তু হাসপাতালটির প্রভাবশালী কর্তৃপক্ষ সুকৌশলে হাত করে নেয় সিভিল কোর্টের মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নতুন উকিলকেও। সংমো হাসপাতাল ছেড়ে আসার পর নতুন হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন আগেকার হাসপাতালের গাফিলতি ও ‘কসাই ডাক্তার’ কর্তৃক অপকর্মের আদ্যোপান্ত। ২০১৩-১৪ সময়টাতে কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বহীনতা, বিশেষ করে ওই সময় দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত এনামুল কবিরের চরম উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনার খেসারতে মূলত তখনই অনিশ্চিত হয়ে যায় ইমরানের ন্যায়বিচার পাবার আশা। চলতি বছর রায় হয় সিউলের নিম্ন আদালতে। আশায় গুঁড়েবালি, হেরে যান ইমরান। রাষ্ট্রদূত এনামুল কবির যিনি সিউলের আগে প্যারিসে কয়েক বছর দায়িত্বপালনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানসহ বহু অফিসিয়াল প্রোগ্রামেই প্রকাশ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, সিউলে আসার পরও ২০১৩-১৪ সময়টাতে ঘুমের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। সময়ের ব্যবধানে অবসরে যাবার আগে রাষ্ট্রদূত এনামুল কবির একটু নড়েচড়ে বসলেই মামলার রায় ইমরানের অনুকূলে যেতে পারতো, এই প্রতিবেদককে এমনটাই জানিয়েছেন সিউলের সচেতন বাংলাদেশিরা। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি এখন সামনে আনছেন তারা। ক’মাস আগে নিম্ন আদালতের দেয়া ‘ফেব্রিকেটেড’ রায়ের বিরুদ্ধে সেই ‘আই-ওয়াশ’ স্টাইলেই করা হয়েছে আপিল। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আপিলের রায় ইমরানের অনুকূলে নিতেও কাজের কাজ কিছুই করছেন না কেউই। কসাই ডাক্তারের কলংকিত সংমো হাসপাতাল কর্তৃক ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাওয়া উকিল দিয়েই দায়সারা গোছের আপিল করার প্রেক্ষিতে বিচারের বাণী আবারো কাঁদবে নিরবে নিভৃতে, এমন আশঙ্কা সিউলসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশিদের। তারা বলছেন, বর্তমান রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান তুলনামূলকভাবে আন্তরিক রয়েছেন ইমরান ইস্যুতে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে তার সঠিক পদক্ষেপের উপর। এদিকে আইনী মারপ্যাঁচে আগেই সরকারি হেলথ ইনস্যুরেন্সের আওতার বাইরে চলে যাওয়ায় অর্থাভাবেও এখন সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না ইমরান। প্যারালাইজড ইমরানের বিভিন্ন থেরাপিসহ আনুষাঙ্গিক চিকিৎসা বাবদ নয়া হসপিটালের বকেয়ার খাতায় প্রতিমাসে যোগ হচ্ছে ৫৯ লাখ কোরিয়ান ওন, ইউএস ডলারের হিসেবে যা ৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ। খাবার ও কেয়ারটেকার বাবদ সাড়ে ১০ লাখ ওন (প্রায় ৯০০ ইউএস ডলার) আলাদাভাবে গুণতে হচ্ছে প্রতিমাসে, সাংগঠনিকভাবে যার যোগান দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া বিসিকে’র তত্ত্বাবধানে। ফান্ড রেইজিংয়ে ইতোমধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্সদের সংগঠন ইপিএস বাংলা। কিন্তু হসপিটালের মূল বিল মাসে মাসে পরিশোধ না করার পরিণতিতে পাহাড়সম বকেয়ার পরিমাণ এখন প্রায় সাড়ে ১১ কোটি ওন তথা প্রায় ৯৮ হাজার ইউএস ডলারের ওপর। অভিজ্ঞজনরা বলছেন, আপিলের রায় ইমরানের অনুকূলে এলেই নিশ্চিত হতে পারে তার সুচিকিৎসা। সিউলের হাসপাতালে অসহায় ইমরান হোসাইনের সঙ্গে কথা বলে সহমর্মিতা জানাতে চাইলে যে কেউ কোরিয়ান লোকাল টাইম খেয়ালে রেখে দিনের যে কোনো সময় ডায়াল করতে পারেন + 82 102 946 5047 এই নম্বরে। কমিউনিটির মনিটরিংয়ে পরিচলিত ইমরানের Bank Account : 1002-144-356723, Benficiary : HOSSAIN IMRAN, Bank Name : WORI BANK (SWIFT CODE: HVBKKRSEXXX) Gyeonggi Do, Korea. আগ্রহী যে কেউ বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া বিসিকের প্রেসিডেন্ট এবি সিদ্দিক রানা (+82 108 770 7746) এবং সেক্রেটারি এমএন ইসলামের (+82 109 629 1477) সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন যে কোনো তথ্যের প্রয়োজনে। বিশ্বব্যাপী ঈদ আনন্দের এই দিনগুলোতে জাগ্রত হোক সবার বিবেক।মাঈনুল ইসলাম নাসিম/ এমএএস/এমএস
Advertisement