মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধর্মপ্রাণ রাজধানীবাসী ঈদের নামাজ শেষে শুরু করেছেন পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর ঘোষিত নির্দিষ্ট স্থান ছাড়াও অলিগলিতে ও পাড়া-মহল্লা চলছে পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা।শুক্রবার ত্যাগের মহিমায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়। প্রধান জামায়াতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক নেতারা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ছাড়াও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষসহ লাখো মুসল্লি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেন ঈদের জামায়াতে। নামাজ শেষে শুরু হয় পশু কোরবানি।ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৯০ ওয়ার্ডে প্রায় পাঁচশ’ স্থান কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্থানে পশু কোরবানি দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও শেষ করেছে দুই ডিসিসি কর্তৃপক্ষ। এখন এসব স্থানে চলছে পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা।তবে বেশ কয়েকটি এলাকায়, নির্দিষ্ট স্থান বাদ দিয়ে খেয়াল খুশি মতো পশু জবাই করতে দেখা গেছে অনেককে। এলাকাবাসীর দাবি, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্দিষ্ট স্থানের তালিকা প্রচার করলেও তা বাধ্যতামূলক নয়। এই সুযোগেই গলির রাস্তায় পশু জবাই চলছে বলে অভিযোগ করছেন তারা।আবার অনেককে নিজ ফ্লাট কিংবা ভাড়া ফ্লাটের নিচে গ্রাউন্ড ফ্লোরে কোরবানির পশু জবাই করতে দেখা গেছে।ডিসিসি সূত্রেও জানা গেছে, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবনিকে উৎসাহিত করতেই তালিকা প্রচার করা হয়েছে। তবে কোনো জায়গাই পশু জবাই বাধ্যতামূলক করা হয়নি।সিটি কর্পোরেশনের দাবি, সচেতনা বাড়াতেই নির্দিষ্ট স্থানের কথা বলা হয়েছে। এতে যদি নগরবাসী সেখানে পশু জবাই না করে তাহলে রাজধানীর পরিবেশ বিপন্ন হবে ও দুর্গন্ধও ছড়াবে। এতে তাদেরই বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হবে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই কোরবানির সময় রাজধানীতে কয়েক লাখ পশু জবাই করা হয়। এসব পশু নগরীর যত্রতত্র জবাই করায় এর থেকে তৈরিকৃত বর্জ্য ডিসিসি যথাসময়ে অপসারণ করতে পারে না। ফলে নগরীজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র দুর্গন্ধ।নগরীর পরিবেশ রক্ষা ও নগরবাসীকে ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৮৫টি এবং উত্তরে ২০৮টি স্থান পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ বাস্তবসম্মত হলেও মানতে রাজি নয় নগরবাসীর অনেকেই। কল্যাণপুরের লেক ভিউ রোডস্থ বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ঘোষিত নির্দিষ্ট স্থানে এক সঙ্গে সবাই তো আর কোরবানি করতে পারবেন না। পালাক্রমে কোরবানি সম্পন্ন করতে হবে। একে তো আজ শুক্রবার। দুপুরে নামাজ পড়তে হবে। সে কারণে সিরিয়াল দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করা সম্ভব হবে না। তাই নিজের বাসার নিচ তলাতেই কোরবানির ব্যবস্তা করা হয়েছে।উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ঘোষিত স্থানগুলোর মধ্যে একটি কল্যাণপুরস্থ বালুর মাঠ ও মধ্য পাইকপাড়ার খোলা মাঠ। এই দুই স্থানের দূরবর্তী বাসিন্দা আব্দুস সালাম। তিনি জানান, এ ধরণের স্থান নির্ধারণের করাণে অনেকেই শঙ্কায় পড়েছেন। তাই কোনো শঙ্কায় যেতে চাই না। নিজ বাসার গলিতেই পশু জবাই করেছি। মহল্লার মসজিদের মাইকে নিজ দায়িত্বে সবাইকে ময়লা পরিস্কার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, মিরপুর, মহাখালী, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, গুলশান, বনানী, বাড্ডা, মতিঝিল ও পুরান ঢাকাসহ বেশ কিছু স্থানে নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে স্থানীয় বাসিন্দারা পশু কোরবানি করছেন।এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রাকিব উদ্দিন বলেন, এবার কোরবানির পশু নির্ধারিত জায়গায় জবাই করার উদ্যোগটি পরীক্ষামূলকভাবে নেয়া হয়েছে। এখন নগরবাসী সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোথায় পশু জবাই করবে।এর আগে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক জানিয়েছেন, বাধ্যমূলক নয় নগরবাসী তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী কোরবানির পশু জবাই করতে পারবেন। তবে তাদের পরিবেশের বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন। এতে তাদেরই ভাল হবে।জেইউ/এসকেডি/এমএস
Advertisement