যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রামনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস হচ্ছে সাবেক সভাপতির পরিত্যক্ত বাড়ির বারান্দায়। মাদুর বিছিয়ে সেখানে চলছে লেখাপড়া। কারণ ঝড়ে বিদ্যালয় ভবন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত ভবনের পলেস্তারা খসে খসে পড়ায় এখন আর সেখানে ক্লাস করা যায় না।
Advertisement
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন, অর্পনা হাজরা ও টুনি দাস জানায়, বেঞ্চ না থাকায় বিছানার ওপর বসে ক্লাস করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। বিদ্যালয়ের ক্লাসের রুমে পলেস্তারা ভেঙে পড়ছে, ভয়ে কেউ ক্লাসে থাকতে চায় না। তাই এখানে ক্লাস করাচ্ছেন শিক্ষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমানের পরিত্যক্ত বাড়ির বারান্দায় বিছানায় বসে ক্লাস নিচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৌসুমী ইসলাম। দীর্ঘক্ষণ বিছানায় বসে ক্লাস করতে কষ্ট হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী শুয়ে, হামাগুড়ি দিয়ে লিখছে।
মৌসুমী ইসলাম বলেন, যদিও বাড়িটি বিদ্যালয় থেকে একটু দূরে তারপরও পাঠদান চালিয়ে নিতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারণ ঝড়ে আমাদের বিদ্যালয় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
Advertisement
প্রধান শিক্ষক ফাতিমা বেগম বলেন, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ১৯৯৬ সালে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন করা হয়। গত দুই বছর আগে বন্যার পানিতে ভবন তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে ভবনের পলেস্তারা খসে পড়তে থাকে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ফণীর আঘাতে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে ২১৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমানের পরিত্যক্ত বাড়ির বারান্দায় বিছানায় বসিয়ে ক্লাস নেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, সাবেক সভাপতি খুবই আন্তরিক ছিলেন। যদিও তিনি চাকরির সুবাদে দূরে চলে যাওয়ায় এবার সভাপতির দায়িত্ব নেননি। বর্তমান সভাপতি শরিফুল ইসলাম শাহিন শিক্ষার্থীদের খাতা-কলমসহ নানা শিক্ষা উপকরণ কিনে দেন। প্রায় বিদ্যালয়ে এসে চকলেট, বিস্কুট কিনে দিয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেন।
জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। ২০ এপ্রিল কার্যক্রম করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম লিখিতপত্র দেন প্রকৌশল বিভাগকে। উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের কয়েকজন এসে পরিদর্শন করে গেলেও আজও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়নি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি শরিফুল ইসলাম শাহিন বলেন, চলতি বছরের নতুন ভবনের তালিকায় নাম না থাকলেও আগামী বছরের তালিকায় বিদ্যালয়ের নাম থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
Advertisement
উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত গাউছুল আজম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করাসহ নতুন ভবনের জন্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখন কি অবস্থায় আছে তা আমি জানি না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেহেলী ফেরদৌস বলেন, ওই বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
মিলন রহমান/এএম/এমএস