স্বাস্থ্য

ঈদের ছুটিতেও স্বস্তি নেই পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের

ঈদের ছুটিতেও সরকারি পঙ্গু হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের স্বস্তি নেই। রাজধানীর অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে ঈদের আগে ও পরে তিন বা চার দিন রোগীর ভিড় অপেক্ষাকৃত কমই থাকে। চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্যরা অনেকটা ছুটির দিনের মতোই গল্পগুজবে সময় কাটান। কিন্তু সরেজমিনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শনকালে ব্যতিক্রম চিত্র লক্ষ্য করা যায়। বৃহস্পতিবার (ঈদুল আজহার আগের দিন) সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। সড়ক দুর্ঘটনা, বহুতল ভবন থেকে পড়ে ও হাট থেকে গরু কিনে ফেরার সময় গরু ছুটে গেলে ধরতে গিয়ে ব্যাথা পাওয়াসহ বিভিন্নভাবে আহত রোগীকে দিনভর চিকিৎসা দিতে গিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হয় চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের। ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা ৬টা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অনন্ত সেনকে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে জরুরি বিভাগে অপেক্ষমাণ রোগীদের আবার পরমুহুর্তেই নিজ কক্ষে এক্সরে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র লিখতে দেখা গেল।আজকে রোগীর ভিড় কেমন জিজ্ঞেস করতেই কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন, নার্সেস স্টেশনে যান। ওখানে সব তথ্য পাবেন। এ কথা বলেই এক বৃদ্ধ রোগীর এক্সরে রিপোর্ট দেখায় মনোযোগী হলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর এ প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে বললেন, আর বলবেন না, আজ রোগী দেখতে গিয়ে ওষুধের নাম ভুল লিখছি আবার ওষুধের নাম ঠিক লিখলে রোগীর নাম উল্টাপাল্টা লিখে ফেলছি। বুঝতেই তো পারছেন রোগীর ভিড় কেমন। পাশেই বসে থাকা আরেকজন সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে বললেন, ঈদের ছুটিতে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা কম থাকে। এ সময় কষ্ট করে রোগীর সেবা দেই। কিন্তু মিডিয়া ইতিবাচক প্রতিবেদন লিখে না। জরুরি বিভাগে বেডে শুয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলেন রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের রিকশাচালক নজরুল। বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়ি দাউদকান্দি যাওয়ার পথে ভবেরচরের সামনে বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেলে মুখমন্ডল ও দুই কানে আঘাত পান নজরুল। আত্মীয়স্বজনরা খবর পেয়ে তাকে পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।মেহেদি হাসান শান্ত। রাজধানীর মনিপুরী পাড়ার বাসিন্দা এ লেবেলের ছাত্র খিলক্ষেত থেকে গরু কিনে ফিরছিলেন। বিজয় সরনীর অদূরে নভোথিয়েটারের সামনে এসে গরু রশি ছিঁড়ে দৌড়ে পালাতে থাকে। গরুর পিছনে দৌড় দেয়ার সময় উল্টে রাস্তার ওপর পড়ে পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। চিকিৎসকরা তাকে বলেছেন, সেলাই করে দিলে বাসায় ফিরতে পারবে। রং মিস্ত্রি দিলীপ মিয়া। গাজিপুরের একটি গার্মেন্টের্সে দোতলায় রেলিং দাঁড়িয়ে জানালা রং করার সময় অসর্তকর্তাবশত পা পিছলে নীচে পড়ে যান। ডাক্তার এক্সরে রিপোর্ট দেখে তাকে জানায় বাম পায়ের হাড় ভেঙে গেছে।  নার্সেস স্টেশনে কর্তব্যরত দুজন নার্স জানান, ঈদের সময়টাতে আশেপাশের সোহরাওয়ার্দী ও হৃদরোগ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চেয়ে তাদের হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেশি থাকে। তারা জানান, গত ১০ ঘণ্টায় শতাধিক রোগী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অধিকাংশই সড়ক দুর্ঘটনার রোগী বলে তারা জানান। এমইউ/একে

Advertisement