দেশজুড়ে

অন্ধ রোগীর এ কেমন চিকিৎসা

চেয়ারে বসে আছেন অন্ধ এক রোগী। তার সামনে বাজনার তালে তালে নেচে গেয়ে ফণা তুলে জিন হাজির করার চেষ্টা করছেন কবিরাজ। পাশেই একটি পাত্রে ধুপের আগুন। জিন আসার পরই মাটিতে পোতা কয়েকটি কলাগাছ সরিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কয়েকজন অবিবাহিত যুবককে। অবশেষে ধরা দিলো জিন! মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন কবিরাজ। কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান হারালেন। ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হলো রোগীকে। আধা ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরলো কবিরাজের।

Advertisement

এভাবেই মেহেরপুরের হিজুলি গ্রামে গত চার দিন ধরে পুরাতন নেছা নামে এক অন্ধ নারীর অন্ধত্ব দূর করতে চিকিৎসা করছেন রাজশাহী থেকে আসা আসাদুল হক নামে এক কবিরাজ। সচেতন মহল ও চিকিৎসকরা বলছেন- এ চিকিৎসার কোনো ভিত্তি নেই। দ্রুতই এ ধরনের কবিরাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

কবিরাজ আসাদুল হক দাবি করেন, তিনি সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। তার চিকিৎসায় অনেক রোগী সুস্থ হয়েছেন। অথচ এই অন্ধ পুরাতন নেছা ভালো হবে কি-না তার জানা নেই।

অন্ধ পুরাতন নেছার স্বামী আব্দুল মাবুদ জানান, ঘটনা গেল দুই বছর আগের। তার বাড়ির ঘর থেকে ২৭টি সাপ মারা হয়। কয়েকমাস পরই তার স্ত্রীর মাথায় ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। চিকিৎসক ও কবিরাজের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরও দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায় তার। পরে রাজশাহীর ওই কবিরাজের শরণাপন্ন হন তিনি। কবিরাজ জানান জিনে তার দুই চোখ পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। তারপরই তিনি এ চিকিৎসার পরামর্শ দেন। অতঃপর আয়োজন করা হয় ঝাপান গানের। চেষ্টা করা হয় জিন হাজিরের। আর এ চিকিৎসা সেবা দেখতে ভিড় জমান হাজারও মানুষ।

Advertisement

মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান বলছেন, এভাবে চিকিৎসা দেয়া ইসলাম সম্মত নয়। মানুষ যখন রোগাক্রান্ত হবে তখন প্রথমে সে চিকিৎসা নেবে। চিকিৎসা নিয়ে সফল না হলে তখন প্রকাশ্যে কুরআনের আয়াত ও হাদিসের দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা যাবে। তবে নকশা, তাবিজের মাধ্যমে জিন হাজির করে চিকিৎসা ইসলাম সমর্থন করে না।

এ বিষয়ে মেহেরপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. অলোক কুমার দাস বলেন, এটি অপচিকিৎসা। দ্রুতই এর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

আসিফ ইকবাল/আরএআর/এমএস

Advertisement