প্রবাস

এক সাহসী নারীর গল্প

বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনএসইউ)পড়াশোনা শেষ করে থাইল্যান্ড দিয়ে ভ্রমণ শুরু। তারপর ভারত ও নেপাল। ততদিনে বিশ্ব দর্শনের ভূত ঘাড়ে চেপে বসেছে কাজী আসমা আজমেরীর। বাড়ি থেকে পিছুটান আসেনি বললে ভুল হবে। মেয়েরা এসব পারে না—প্রতিবেশী স্বজনদের এমন টিটকারী তার জেদটা আরও বাড়িয়ে দেয়। তারপর চলা। সেই যে শুরু আজও চলছেন পথে-প্রান্তরে। কাজী আসমা আজমেরী একমাত্র বাংলাদেশি নারী, যিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ১১৩টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সাথে।

Advertisement

জাগো নিউজ : বিশ্ব ভ্রমণ শুরুর গল্পটা কীভাবে?

আসমা : শুরুটা ২০০৯ সালের দিকে। প্রথম ভ্রমণের তালিকায় ছিল থাইল্যান্ড। কিশোরী বয়সটা আমার ভ্রমণেই কেটেছে। সেই সময় একা একা ভ্রমণ করতাম। পরিবারের শত বাধা সত্ত্বেও কখনও থেমে থাকিনি। জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছি। আমি দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াই বাবা সেটা কখনও চাননি। টাকা-পয়সা তো দিতেই চাইতেন না বরং আমাকে আটকানোর চেষ্টা করতেন। বাবা চাইতেন পড়ালেখায় মনোযোগী হই। কেন জানি ঘরে আমার মন টিকতো না। কোনোভাবেই বাবার কথা নিজেকে বোঝাতে পারতাম না।

জাগো নিউজ : আপনার বেড়ে ওঠা কোথায়?

Advertisement

আসমা : খুলনা শহরে বড় হয়েছি। আমার বাবা কাজী গোলাম কিবরিয়া। মা কাজী সাহিদা আহমেদ। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি। ইকবালনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করেন। একই বিষয়ে বিবিএ করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

জাগো নিউজ : এখন পর্যন্ত কতটি দেশ ভ্রমণ করেছেন?

আসমা : এ পর্যন্ত আমি ১১৩টি দেশ ভ্রমণ করেছি। সর্বশেষ ভ্রমণের তালিকায় আন্দরা। এটি ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে পূর্ব পিরানীসে অবস্থিত। শততম দেশ হিসেবে ২০১৮ সালে ভ্রমণ করেছিলাম তুর্কমেনিস্তান। ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, লাওস, ভুটান, কম্বোডিয়া, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, তুরস্ক, সাইপ্রাস, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানি ভ্রমণ করেছি ২০১৪ সালেই।

জাগো নিউজ : দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে?

Advertisement

আসমা : ২০১২ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা রেডক্রসে কাজ করেছি কয়েক বছর। চেষ্টা করলে হয়তো ইউরোপীয় পাসপোর্ট পাওয়া যেত। কিন্তু চেষ্টা করিনি কখনো। দেশের পাসপোর্টেই নিজের পরিচয় দিতে ভালো লাগে।

জাগো নিউজ : বিশ্ব ভ্রমণের নেশাটা কোথা থেকে আসে?

আসমা : ছোটবেলায় মায়ের কাছে ইবনে বতুতা, মার্কো পোলোর, শেখ সাদী, ওমর খৈয়ামের গল্প শুনতাম। মূলত তাদের গল্প শুনতে শুনতেই আগ্রহ বেড়েছে। আমার পরিবারে মামা-চাচা ছাড়া সবাই কমপক্ষে ১০টি দেশ ভ্রমণ করেছে। সেটাও একটা ব্যাপার ছিল। তাদের দেখে আমার মনে হতো আমি কেন পারব না। আমার অবশ্য পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল আমেরিকায়, কিন্তু বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় খুলনা থেকে ঢাকায় আসতে পেরেছি।

জাগো নিউজ : বিশ্ব ভ্রমণ শুরু কার অনুপ্রেরণায়?

আসমা : নিজের অনুপ্রেরণাই বেশি ছিল। ওই সময় কেউ আমাকে সাহস দেয়নি। শত বাধা মোকাবিলা করে এগিয়ে গেছি। ওই সময় এক বন্ধুর মা আমাকে মেয়ে বলতেন। তিনি ছেলেসহ ২৬টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। উনাকে দেখে অনেকটা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। কোনো একদিন আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, ইউনিভার্সিটিতে সব মেয়েরা এক কেন? ব্যতিক্রম নাই কেন? কেন একটা মেয়ে সেরা হতে পারে না? এসব বিষয় নিয়ে তখন খুবই ভাবতাম। ওই সময় মাথায় ভূত চেপে বসলো ১০০টি দেশ ভ্রমণ না করা পর্যন্ত বিয়েই করব না!

জাগো নিউজ : চলার পথে কোনো সমস্যা হয়নি?

আসমা : বিশ্ব ভ্রমণে আনন্দময় ঘটনার পাশাপাশি নিরানন্দময় ঘটনার সম্মুখীনও হয়েছি কখনও কখনও। ২০০৯ সালে ভিয়েতনামে রিটার্ন টিকিট না থাকায় ২৩ ঘণ্টা জেলে থাকতে হয়েছে। ২০১০ সালের ২৪ এপ্রিল এবং মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সাইপ্রাসে দু’দুবার জেল খেটেছি। ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট কিউবায় ট্যাক্সির সঙ্গে স্কুটির সংঘর্ষ হয়। একজন স্পট ডেড। স্রষ্টার ইচ্ছায় বেঁচে গিয়েছিলাম। সত্যিই সেই দিনগুলো ভুলবার নয়। সেই সময়ের কথা মনে পড়লে আজও চোখ দিয়ে পানি বের হয়।

জাগো নিউজ : বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেমন লাগছে?

আসমা : পৃথিবী কত সুন্দর তা বলে বোঝানো যাবে না। আমি মনে করি যে ভ্রমণ করলো না সে চোখ থেকেও অন্ধ। বৈচিত্র্যময় বিশ্ব খুলনার ছোট শহরে বসে জানতে পারা সম্ভব নয়। হেঁটেছি সেই মরুভূমির প্রান্তরে। গোবি মরুভূমি, যেখানে হাজার হাজার মানুষ পানি না খেয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে, হেঁটেছি সেই সাহারায়। চোখে ধুলোবালি ভরে গেছে। রাতে থাকতে হয়েছে তাঁবুতে। দেখেছি মরক্কোর তাসভীরে ইবনে বতুতার জন্মভূমি। পান করেছি সুপেয় পানি। দেখেছি ফারাওয়ের পিরামিড। নীল নদে ঘুরেছি। নদের আশপাশে রমণীদের নৃত্য হয় প্রতিদিন। সেখানেও অংশগ্রহণ করেছি।

স্ট্যাচু অব লিবার্টির মাথায় চড়ে থেকে দেখেছি এলিয়ট আইসল্যান্ড। কীভাবে শ্বেতাঙ্গ ইমিগ্র্যান্টে এসে আমেরিকার স্বপ্নে থেকেছে দিনের পর দিন। চড়েছি আইফেল টাওয়ারে। খুঁজে বের করেছি মিউজিয়াম। যেখানে মোনালিসা দাঁড়িয়ে আছে তার অদ্ভুত হাসিমুখে। এ ছাড়া ভাস্কো দা গামা, আইনস্টাইন, আলবার্ট আইনস্টাইনসহ অনেকের বাড়ি পরিদর্শন করেছি। বাড়িগুলোতে রাতযাপন করারও সুযোগ হয়েছে আমার। সাউথ কোরিয়ানদের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছি, তাদের ভাষা বুঝিনি। তবুও তথ্যের আদান-প্রদান হয়েছে। সাউথ কোরিয়ানের এক বাসায় তিনদিন থেকেছিলাম। তারা আমাকে সবকিছু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল।

মাদার তেরেসা আলবেনিয়ার সেডা শহরে চার বছর বয়সে প্রার্থনা করতেন। সেখানেও কিছুটা সময় থাকার সুযোগ হয়েছিল। ২০০৮ সালে মাদার তেরেসার আশ্রমে বয়স্কদের সেবা করেছি। সেখানে আট দিন ছিলাম। গুয়েতেমালায় পাহাড়ে ভ্রমণে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এক চীনা বন্ধু আমাকে সাহায্য করেছিল। সেসব দিন, মানুষ কোনোভাবেই স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না।

জাগো নিউজ : ঘুরতে গিয়ে কোন দেশের মানুষের ব্যবহার বেশি ভালো লেগেছে?

আসমা : সব দেশের মানুষই ভালো। নিউজিল্যান্ডের মানুষকে অনেক বেশি আপন মনে হয়েছে। এ কারণেই ভালোবেসে থেকে গেছি দেশটিতে। বিপদ-আপদে সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। অন্ধকারে এক শহর থেকে আরেক শহরে যাওয়ার জন্য যখন কোনো লোক ছিল না তখন তারাই আমাকে সাহায্য করেছিল। অনেক সময় টাকার অভাবে আমি খেতে পারিনি। তারা আমাকে খাবার দিয়েছে। টাকা দিয়েছে চলার জন্য। এ ছাড়া ফিজিতে আমার এক বন্ধু তার বাড়িতে নিয়ে কতসব আয়োজন করেছে। তাদের বাড়িতে দুদিন ছিলাম। এরই মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অনেক বন্ধু হয়েছে এবং তারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে।

জাগো নিউজ : ইউরোপ থেকে আফ্রিকাকে আলাদা করে কী বলবেন?

আসমা : ইউরোপ থেকে আফ্রিকাকে আলাদা করে বলার অনেক কিছুই আছে। ইউরোপে শ্বেতাঙ্গ আদিবাসী বেশি। ইস্টার্ন ইউরোপে গিয়ে দেখি কৃষ্ণাঙ্গ লোকদের দেখাই যায় না। একদমই কম। আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ সবচেয়ে বেশি। শ্বেতাঙ্গও কম নয়। মূলত আফ্রিকার শহরগুলোতে শ্বেতাঙ্গদের বসবাস। ইউরোপজুড়ে রয়েছে শ্বেতাঙ্গরা। তাদের মধ্যে চরিত্রগত তেমন একটা পার্থক্য পাইনি।

জাগো নিউজ : ভ্রমণে কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে?

আসমা : পাসপোর্টে যেমন বিড়ম্বনা আছে ভ্রমণেও তেমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টে অনেক দেশেই সহজে যাওয়া যায় না। একটা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলি তাহলে। সম্প্রতি ইতালির মিলান শহরে পাসপোর্ট হারিয়ে খুব বাজে অবস্থায় পড়েছিলাম। প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে টাকা-পয়সা এবং খাবার দিয়ে সাহায্য করেছেন। আমি জীবনেও তাদের কথা ভুলব না।

মিলানের ডমও অ্যাক্টের ভেতর থেকে ভিড়ের মধ্যে আমার মানিব্যাগ, পাসপোর্ট, কাগজপত্র টাকা-পয়সা চুরি হয়ে যায়। ওই সময় টেনশনে আমার অবস্থা পাগলপ্রায়। আমার এমন অবস্থা হয়েছিল ভাষাজ্ঞানই হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরে এক ইতালিয়ান নারী আমাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যান। তিনি আমাকে পুলিশের সাথে কথা বলতে সাহায্য করেছিলেন। তারপর পুলিশ আমাকে বলে, আপনার পাসপোর্ট আপনি ডাস্টবিন কিংবা ময়লার আশপাশে খোঁজেন। চোররা টাকা-পয়সা নিয়ে ফেলে দেয়। আমি মিলানের সব ডাস্টবিন এবং ময়লার বস্তা খুঁজতে লাগলাম পাগলের মতো। এটা মনে করে আমার আজকেও খুব কষ্ট লাগে যে, আমাকে কতটা ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল। পাসপোর্ট হারানোর কারণে ভবিষ্যতে হয়তোবা অনেক দেশেই আমি যেতে পারব না।

জাগো নিউজ : দক্ষিণ আমেরিকার ভ্রমণ নিয়ে কিছু বলেন।

আসমা : দক্ষিণ আমেরিকার শিকাগো শহরে আমি দুই বছর ছিলাম। শহরটি খুবই পছন্দের। দেশটিতে নিরাপত্তার অভাব থাকায় চলে আসি। একদিকে যেমন সুন্দর তেমনি তার অসুন্দর নেইবারহুড তাকে কলুষিত করেছে। আমার বাসা ৫৪ এভিনিউতে ছিল। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার গলির পরের গলি। শিকাগো সায়েন্স মিউজিয়ামের পাশেই আমার বাসা। শিকাগোর আর্ট মিউজিয়ামে সব সময় আমার পদচারণা ছিল।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, যখন শিকাগোতে কারও বাসায় বেড়াতে যেতাম তখন দেখতাম, তাদের খাবার টেবিলের ওপর সব সময় একটা করে বন্দুক থাকতো। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে নিরাপত্তার অভাব কতটা ছিল সেখানে। কেন জানি আমার ওদের পরিবেশ দেখে ভয় লাগতো। আমেরিকার প্রায় ২২টি রাজ্য ঘুরেছি। হিউস্টোনের নাসা থেকে শুরু করে সেন্ট অগাস্টিন যাওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আমেরিকার ১২৭টি শহরে গিয়েছি।

সবচেয়ে ভালো লেগেছে যখন নায়াগ্রা ফল ব্রিজ দিয়ে আমেরিকা হয়ে হেঁটে যায় অভিবাসনবান্ধব কানাডায়। কানাডা যেমন বড় তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। কানাডার ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে দেশটির সার্কাস। পৃথিবীজুড়ে অনেক বিখ্যাত এটি। টরেন্টোর সিএন টাওয়ারের ধারে বসে ডিনার করা আমার সহকর্মীদের সাথে এটা ছিল একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। কেননা ওই সময় আমাকে মাত্র ১০ মিনিট সময় দিয়েছিল বর্ণনা করতে। আমার ভ্রমণ জীবন বর্ণনা করে কানাডিয়ান ও আমেরিকান ৮৬ জন রোটারিয়ানের সামনে আমার বাংলাদেশকে তুলে ধরি। তারা তো খুবই অবাক বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশের মেয়ে হয়ে আমি এত অল্প বয়সে ১০০টির মতো দেশ ভ্রমণ করেছি।

মন্ট্রিয়েলে জাস্টিস ফেস্টিভাল পৃথিবী খ্যাত। কানাডা হচ্ছে রেম্বো কালারের সমন্বয় একটি দেশ যেখানে সমকামীদের অনেক সম্মান করা হয়। প্রতি বছর জুনে এক সপ্তাহ বিভিন্ন ফেস্টিভাল হয় তার ভেতর সমকামীদের রেমবো ফেস্টিভাল একটি উল্লেখযোগ্য। টরন্টো কিংবা নিউইয়র্ক হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মাল্টিকালচারে পরিপূর্ণ। এখানে বিভিন্ন দেশের লোকজনকে দেখা যায় এবং তাদের কালচার সম্পর্কে জানা যায়। নিউইয়র্কে যেমন বাংলাদেশি পাড়া আছে তেমনি আবার লেবাননের ব্রকলিন রয়েছে।

জাগো নিউজ : বিশ্বের কোনো অঞ্চল অদেখার মধ্যে আছে?

আসমা : সবে শুরু বলা যায়। অনেক দেশ অনেক শহরই অদেখা রয়েছে এখনও। নর্দান লাইট, আইসল্যান্ড, ফোক আইল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, এন্টার্টিকা, আলজেরিয়া তিউনিসিয়া, মক্কা, মদিনা, জর্ডান ও আফ্রিকা তালিকায় রয়েছে। আশা করছি দ্রুত দেশগুলো দেখে ফেলব। পাসপোর্ট চুরি হয়ে না গেলে এখন আমি আফ্রিকায় থাকতাম।

জাগো নিউজ : কোন দেশকে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে?

আসমা : সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে আফ্রিকার মরক্কো। দেশটিতে মরুভূমির পথে উটের পিঠে চড়েছি দিনে কমপক্ষে চার ঘণ্টা। ইবনে বতুতার বাড়িটি খুবই ভালো লেগেছে। এ ছাড়া দেখার মতো রয়েছে সাহারা মরুভূমি, নীল সমুদ্র। ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরা দেশটি। সেখানে রয়েছে পৃথিবী খ্যাত বাজার। যেখানে মানুষের দাঁত বিক্রি হয়। শহরটিতে সব প্রকার জীবজন্তু পাওয়া যায়। এদিকে সাউথ আমেরিকার বলিভিয়া খুবই সুন্দর একটি দেশ। সেখানে আমার মনটা আজও পড়ে রয়েছে।

জাগো নিউজ : ভ্রমণের জন্য তো প্রচুর অর্থের প্রয়োজন পড়ে, কীভাবে জোগাড় করেন?

আসমা : প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয় এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এও সত্য, প্রচুর টাকা থাকলেও ঘোরাঘুরি করা যায় না। সত্যি বলতে ঘুরতে বড় একটা মন লাগে। উদার মানসিকতা ছাড়া বিশ্ব ভ্রমণ সম্ভব নয়। আমাদের সব সময় পরিকল্পনামাফিক চলতে হবে। পরিকল্পনা ছাড়া এক পা এগোনো ঠিক হবে না। আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, আপনি ভ্রমণে যাচ্ছেন নাকি শপিংয়ে যাচ্ছেন? অনেকে ভ্রমণে গিয়ে শপিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরে দেখা যায় দেশে ফেরার টাকা থাকে না। আমি নতুনদের উদ্দেশ্যে বলবো, শুরু করেন। কাল নয় আজকে শুরুটা আপনার জন্য হয়তোবা মঙ্গল।

জাগো নিউজ : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য কী বলবেন?

আসমা : বাংলাদেশের নারীরা শাড়ি কিংবা গহনা কেনায় ব্যস্ত থাকে বেশি। আমি একটু ভিন্ন। আমার গচ্ছিত গহনা বিক্রি করে ভ্রমণ শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে খুঁজতে থাকি কোন দেশের কী পরিস্থিতি। কোথায় ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। কোন দেশে বিমানের টিকিটের রেট কম আছে। বলা যায় ভ্রমণের বিষয়ে আমার সবসময় চোখ-কান খোলা থাকতো।

আমি অ্যাম্বাসির কোনায় কোনায় ঘুরতাম, যদি কারও সহযোগিতা পাই। ভিসা জটিলতায় আমাদের অনেক সময় চরম বিপাকে পড়তে হয়। ভ্রমণবিষয়ক বিভিন্ন ক্লাবের সদস্য হয়েছি। ফলে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি। ফলে তাদের কাছে বাংলাদেশের কালচার শেয়ার করতে পারি। দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারি। তাদের সহযোগিতায় বিভিন্ন দেশের ভিসা এবং সব ধরনের ভ্রমণবিষয়ক আপডেট পেয়ে থাকি।

এমএসএইচ/এমআরএম/এমএস