ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশ জনের বেশি এমপি কাশ্মীর সফর করেছেন। রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি অবরুদ্ধ উপত্যকায় সফর করলেন। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিক সফরে আসেননি। এসেছেন ভারতের বিশেষ নিমন্ত্রণে। নিমন্ত্রণটা কে করেছে তাই নিয়ে এবার প্রশ্ন উঠেছে।
Advertisement
ইইউ প্রতিনিধিদের অনানুষ্ঠানিক এই সফরের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে নয়াদিল্লিভিত্তিক একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক। যার নাম ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নন-অ্যালাইনড স্টাডিজ। ইইউ এমপিদের ভারতে আসার নিমন্ত্রণ পত্র পাঠান মেদি শর্মা নামের এক নারী।
মেদি শর্মা নামের ওই নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নিজেকে একজন সামাজিক পুজিবাদী, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ব্রোকার এবং শিক্ষা উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। সমালোচনা শুরু হওয়ার পর বুধবার সকালে আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নয়াদিল্লি কার্যালয়ে গিয়ে সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায় ।
গত সোমবার যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেদি শর্মা নামের ওই আমন্ত্রণকারী ব্যক্তি। সমালোচনা শুরু হওয়ার পর তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
Advertisement
তবে ইইউ এমপিদের তিনজন ভারতের শর্ত না মানায় তারা কাশ্মীর সফরে যেতে পারেননি। বাদ পড়া তিনজনের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলীয় এমপি ক্রিস ডেভিসের সঙ্গে মেদি শর্মার বিনিময় হওয়া ইমেইল দেখা গেছে, নিজের ইচ্ছেমতো ঘুরতে চাওয়ার দাবি করায় তাকে কাশ্মীরে যেতে দেয়া হয়নি।
গত ৭ অক্টোবরের এক মেইলে মেদি শর্মা লিখেছেন, ‘আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠকের আয়োজন করছি। আমি আপনাকে এই বৈঠকের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনি হয়তো অবগত আছেন নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি এক ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় এসেছেন।’
ইমেইলে আরও লেখা আছে, ‘ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারত ও তার দেশের জনগণের জন্য তার যে উন্নয়ন পরিকল্পনা তিনি গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। তাই তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি নির্ধারণী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চান।’
মেদি শর্মার পাঠানো ওই মেইল বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৮ অক্টোবর। মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পরদিন ২৯ অক্টোবর ইইউ প্রতিনিধি দল কাশ্মীর সফরে যাবেন। পরদিন অর্থাৎ আজ বুধবার ৩০ অক্টোবর তারা কাশ্মীর সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।
Advertisement
ইইউ প্রতিনিধিদেরকে ওই ইমেইল বার্তায় আরও জানানো হয়, প্যান ইউরোপীয় রাজনীতিবিদদের তিনদিনের এই সফরে বিমান ভাড়া ও থাকা-খাওয়াসহ সকল ধরনের যাতায়তের ব্যবস্থা ও ব্যয়ভার বহন করবে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নন-অ্যালাইনড স্টাডিজ।
আমন্ত্রণ পাওয়ার পরদিন ক্রিস ডেভিস নামের ওই ইইউ এমপি ফিরতি মেইলে বলেন, তিনি এই দলের সঙ্গে যেতে রাজি আছেন তবে তাকে কাশ্মীরে যাওয়ার পর নিজের মতো করে চারপাশ ঘুরে দেখার সুযোগ দিতে হবে। তখন মেদি শর্মা বলেন আমরা এ নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করবো।
তারপর ১০ অক্টোবর মেদি শর্মা নামের ওই নারী ক্রিস ডেভিস নামের বামপন্থী ওই এমপিকে মেইলে বলেন, ‘আমি আসলে খুবই দুঃখিত যে এই পর্যায়ে এসে আমরা আর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কোনো এমপিকে এই সফরের সঙ্গে যুক্ত করতে পারছি না। আমাদের যে সাক্ষাতের কথা ছিল সেটি বাতিল করলাম।’
ক্রিস ডেভিস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে কারণ আমি কাশ্মীরে গিয়ে সেখানকার সাধারণ মানুষের অবস্থা দেখার সুযোগ চাচ্ছিলাম। তাই আমি আগেই থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখা যে ‘সব ঠিক আছে’ ধরনের মোদি সরকারের জনসংযোগ মূলক অবস্থান দৃঢ় করতে জন্য সেখানে যাচ্ছি না।’
দিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নন-অ্যালাইনড স্টাডিজের তালাবদ্ধ কার্যালয়
লেবার পার্টির ওই এমপি বলেন, ‘মোদি সরকারের এমন অবস্থানের মধ্য দিয়ে এটা খুব স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে যে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে সত্যিই তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাই বিশ্ব নেতাদের এ বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া উচিত।’
ইইউ এমপিদের ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল মঙ্গলবার কাশ্মীর সফর করেছেন। তারা যখন শ্রীনগরে যাচ্ছিলেন তখন তাদের গায়ে ছিল বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। কড়া নিরাপত্তা বেস্টনীর মধ্যে তাদেরকে কাশ্মীর ঘুরিয়ে দেখানো হয়।
কাশ্মীরে ইইউ প্রতিনিধি দল ছিলেন পাঁচ তারকা হোটেলে। সেখানে মোতায়েন সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছেন, বৈঠক করেছেন তারা। সেনাবাহিনী তাদেরকে কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। তারা আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের পক্ষ নেয়া উচিত গোটা বিশ্বের।
এসএ/এমএস