কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার নোয়াগাঁও ব্যাপারীপাড়ায় সিয়াম (৯) নামে এক শিশুকে গরম দুধ ঢেলে ঝলসে দিয়েছেন শিল্পী বেগম নামে এক গৃহকর্ত্রী।
Advertisement
সিয়াম স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়ে। বাবা মানিক মিয়া পেশায় অটোরিকশার চালক। আর মা খোর্শেদা বেগম গৃহিণী।
পরিবারের অভিযোগ, গত শনিবার বিকেলে বাড়ির কাছে বালুর স্তূপে খেলছিল সিয়াম। এতে ক্ষুব্ধ হন বালুর মালিক গৃহকর্ত্রী শিল্পী বেগম। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। সেই ঘটনার জের ধরে সিয়ামের শরীরে ফুটন্ত দুধ ঢেলে দিয়েছেন শিল্পী। এতে ছোট্ট সিয়ামের শরীর ঝলছে গেছে। সেই দগ্ধ শরীর নিয়ে এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেড়ে কাতরাচ্ছে সে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক নিয়ামুল কবির জানান, সিয়ামের ডান হাত, কাঁধ ও মুখমণ্ডলের নিচের অংশ ঝলসে গেছে। শরীরে যন্ত্রণা থাকলেও মৃত্যুঝুঁকি নেই।
Advertisement
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে শিল্পী বেগম বলেন, কথা-কাটাকাটির সময় চুলায় ভাত রান্না হচ্ছিল। তখন অসাবধানতাবশত সিয়াম চুলার ওপর পড়ে যায়। এতে গরম মাড়ে সে দগ্ধ হয়।
স্থানীয়রা জানান, শিল্পীর স্বামীর নাম সুলায়মান মিয়া বিদেশে থাকেন। সুলায়মান ও মানিকের ঘর লাগোয়া। নির্মাণকাজের জন্য কিছুদিন আগে বাড়ির কাছে বালু এনে রাখেন শিল্পী। শনিবার ওই বালুর ওপর বসে খেলছিল সিয়াম। শিল্পী এসে বারণ করেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিল্পী তাকে বকাঝকা করেন। তখন সিয়ামের মা খাদিজা বেগম এসে শিল্পীকে বকাবকি করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে শিল্পী গরম দুধ নিয়ে এসে সিয়ামের গায়ে ঢেলে দেন। এ সময় তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিয়ামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু অর্থাভাবে তাকে ঢাকায় না নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সিয়ামের মামা মো. বাবুল মিয়া জানান, একটি তুচ্ছ ঘটনায় শিল্পী বেগম আমার ভাগ্নেকে গরম দুধ ঢেলে সারা শরীর ঝলসে দিয়েছে। এখনও সে সুস্থ হয়নি। তার মা-বাবা থানায় মামলা করতে চেয়েছিল। কিন্ত এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে মামলাও করতে পারছে না। আমি ঘটনার কঠোর বিচার দাবি করছি।
পুলিশের ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রেজোয়ান আহমেদ দীপু বুধবার মোবাইল ফোনে জাগো নিউজকে জানান, ঘটনার খবর পেয়ে শিশুটির মা-বাবাকে কুলিয়ারচর থানায় ডেকে আনা হয়েছে। কিন্ত তারা বলছে শিল্পীর পরিবার শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। সে সুস্থ হলে স্থানীয়ভাবে সালিশ করে বিষয়টি মীমাংসা করবে। যদি সঠিক বিচার না পায় তখন তারা পরবর্তীতে থানায় অভিযোগ দিবে। তিনি বলেন, বাদী পক্ষ অভিযোগ না দিলে পুলিশ কীভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
Advertisement
আসাদুজ্জামান ফারুক/এমএমজেড/জেআইএম