বিষয়টাকে মোটেও গুরুত্ব দেননি তিনি। দুই বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আগে জুয়াড়িদের কাছ থেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সেই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আইসিসি অ্যান্টি করাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিটের আইন অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে চলতে পারেননি সাকিব। ছোট্ট একটি ভুল করে ফেলেছিলেন। বিষয়টা জানাননি বিসিবি কিংবা আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশনকে।
Advertisement
এই একটি ছোট্ট ভুলের কারণেই এখন মহা বিপদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আইসিসির কাছে প্রমাণিত, সাকিবের কাছে জুয়াড়ি ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। সাকিব ফিরিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টা জানাননি কাউকেই, গোপন করেছিলেন। এটাই হলো অপরাধ। এই অপরাধে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞার শাস্তি আরোপ হতে পারে সাকিবের ওপর।
তবে, আইসিসির তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন সাকিব। জানিয়েছেন, তিনি ভুল করে ফেলেছেন। মূলতঃ বিষয়টাকে গুরুত্ব দেননি বলেই কাউকে জানানো হয়নি। গুরুত্ব যদি দিতেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই আইসিসি এবং বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে জানাতেন। কিন্তু বিষয়টাকে মোটেও আমলে নেননি বলেই এই ভুল করেছেন। আইসিসির কাছে এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থীও হয়েছেন তিনি। যে কারণে, ১৮ মাসের নিষেধাজ্ঞার শাস্তি আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাকিবের কাছে জুয়াড়ির প্রস্তাবের বিষয়টি আইসিসি পরে জানতে পারে। আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের কল রেকর্ড ট্র্যাকিং করে এ ব্যাপারে সব তথ্য উদ্ধার করে তারা। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ওই জুয়াড়ি আইসিসির কালো তালিকায় থাকাদের একজন।
Advertisement
বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর সম্প্রতি সাকিবের সঙ্গেও কথা বলেন আকসু প্রতিনিধি। সাকিবও নিজের ভুল স্বীকার করেছেন আকসু তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, জুয়াড়ির প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেননি বলেই জানাননি। বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়াটাই তার জন্য কাল হয়েছে।
ফলে আজ অথবা আগামীকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব ধরনের ক্রিকেটে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানাবে আইসিসি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিসিবি এরই মধ্যে এ বিষয়ে অবগত হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে সাকিবের ব্যাপারে বিসিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছে। এমনকি তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে সাকিবকে অনুশীলন না করানোরও নির্দেশন দিয়েছে আইসিসি। এ কারণে অসুস্থ বলে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিচ্ছেন না সাকিব।
জুয়াড়ির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেও আকসুকে না জানানোর বিষয়ে কি আইন রয়েছে?আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতিমালায় আছে, কোনো ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ, আম্পায়ার, স্কোরার, গ্রাউন্ডসের সদস্য, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংশ্নিষ্ট যে কেউ জুয়াড়ির কাছ থেকে যে কোনো ধরনের প্রস্তাব পেলে তাৎক্ষণিকভাবে তা আইসিসি বা সংশ্নিষ্ট দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি দমন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। যতটা দ্রুত সম্ভব সেটা করার নির্দেশনা আছে।
এ জন্য প্রতিটি সিরিজ বা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আইসিসি থেকে ক্রিকেটার এবং অফিসিয়ালদের সচেতন করতে জুয়াড়িদের সম্পর্কে অবগত করা হয়। আইসিসির তালিকাভুক্ত জুয়াড়িদের ছবি ও ফোন নম্বর টানিয়ে দেওয়া হয় ড্রেসিংরুমের পাশে। প্রতিটি আন্তর্জাতিক সিরিজে আকসুর সদস্য উপস্থিত থাকেন।
Advertisement
বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেট মৌসুম শুরুর আগেও আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের নির্দেশনা মেনে খেলোয়াড়, টিম অফিসিয়াল, ম্যাচ অফিসিয়াল এবং গ্রাউন্ডস কর্মীদের সচেতন করা হয়। এ কাজটি করেন বিসিবির দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা মেজর (অব.) মোর্শেদুল ইসলাম। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা এবং জুয়াড়িদের ছায়া থেকে দূরে রাখতে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে রাখা হয়েছিল তাকে।
আকসুর নিয়মে আছে, কোনো ক্রিকেটার, ম্যাচ অফিসিয়াল, টিম অফিসিয়ালসহ সরাসরি ক্রিকেটে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনৈতিক প্রস্তাব না জানিয়ে চেপে গেলে, লুকানোর চেষ্টা করলে বা আকসুর জিজ্ঞাসাবাদেও অস্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে ‘আইসিসি অ্যান্টিকরাপশন’ ধারা ২.৪.২, ২.৪.৩, ২.৪.৪, ২.৪.৫ ও ২.৪.৬ কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ছয় মাস আর সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে আইসিসি। সাকিব আকসুর জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করায় ১৮ মাস শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে আপাতত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আইসিসি।
আইএইচএস/পিআর