রাজধানী ফাঁকা হতে শুরু করলেও বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনমুখী সড়ক এবং রাজধানী থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলোতে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে গলিপথের রাস্তাতেও। যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকায় আমিনবাজার, সাভারেরর মতো তুলনামূলক নিকটস্থ ঘরমুখো মানুষকে পায়ে হেটেই রওয়ানা দিতে দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার-আশুলিয়ায় বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। কোরবানির গরু বোঝাই ট্রাকের কারণে যাত্রীবাহী ছোট বড় বাসগুলো পড়েছে মহাবিপাকে। যানবাহনের ধীরগতি ও রাস্তায় পথচারী হিসেবে ঘরমুখো মানুষের চাপ ও গরুবাহী ট্রাক বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করছে ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ। এদিকে, পরিস্থিতি অনুযায়ী গত ঈদের চেয়ে এবার যানজট বেশি হয়েছে বলে দাবি করছেন যাত্রী সাধারণ। মঙ্গলবার রাত থেকে রাজধানীর ঈদ সার্ভিসের বাসগুলো ধীর গতিতে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে বুধবার দুপুর আড়াইটার পর থেকে এই যানজট প্রকট আকার ধারণ করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেক বাস ও পশুবাহী ট্রাক। অন্যদিকে, ঈদের আগের তিন দিন ও পরের তিন দিন রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শাহ সিমেন্টের বেশ কয়েকটি ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায়। এর মধ্যে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আমিন বাজার ব্রিজের উপর একটি ট্রাক বিকল হওয়ায় অচলাস্থা আরও প্রকট হয়। ট্রাফ্রিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার অফিস-আদালতের শেষ কর্মদিবস। আবার আর এক দিন পরেই ঈদ। তাই পশুর হাটও জমজমাট। ট্রাকের পর ট্রাকে আসছে পশু। পশুবাহী ট্রাকের ধীর গতি ও টার্মিনাল কেন্দ্রিক যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই যানজট দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার দুপুরেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর থেকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কে ঢাকামুখী যানজট দেখা দেয়। এর চাপ পড়ে অন্য রাস্তাতেও। অন্যদিকে, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ডিইপিজেড পয়েন্টের উভয় দিকেই অন্তত তিন কিলোমিটার পর্যন্ত রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। যানজট রয়েছে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো, আশুলিয়া ও জামগড়া পয়েন্টে। এই চাপ এসে ঠেকেছে সাভারের আমিন বাজার ব্রিজ পর্যন্ত। এ ব্যাপারে সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল শেখ জানান, দুপুরের পর যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গরুবাহী ট্রাকের ধীরগতির কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ঢাকামুখী গাড়ির চাপে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও রাজধানীর এক মাত্র স্থায়ী হাট গাবতলীতে হওয়ায় এই এলাকায় যান চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। গাবতলীতে কথা হয় দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিমুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, পশুবাহী ট্রাকের কারণে কল্যাণপুর থেকে গাবতলী পশুর হাট পর্যন্ত যানজট লেগে আছে। আমিনবাজার ব্রিজ ফাঁকা করে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে পুলিশ। এদিকে, সায়েদাবাদ, মহাখালী, ও বিশেষ করে বসুন্ধরা এলাকা থেকে রামপুরা রোডে তীব্র যানজট লেগে আছে দুপুর থেকেই। বৈশাখী বাসের যাত্রী নাছিমা আক্তার জানান, দুপুর আড়াইটায় উত্তর বাড্ডা থেকে তিনি বাসে উঠেন। কিন্তু বিকেল ৫টার সময়ও গাবতলীতে পৌঁছাতে পারেননি। গাবতলী থেকে সাভার রোডে যানচলাচল স্থবির হয়ে পড়ায় বাস আবারো বাড্ডা ফিরে যাচ্ছে। অগত্যা আমাকে তাই নামতে হলো টেকনিক্যালে। যানচলাচলে স্থবিরতা ও বাসে সিট না মেলায় অসংখ্য মানুষকে দেখা যায় পায়ে হেটে রওয়ানা দিতে। রওশন আলী নামে এক যাত্রী জানান, সাভারে যাবো। রাস্তার যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে না আজ যানজট কমবে। কষ্ট হলেও কিছু করার নেই। ২ ঘণ্টা হাটলেই আমি সাভার পৌঁছাতে পারবো। ডিএমপি উত্তর ট্রাফিক বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও) আবু ইউসুফ বলেন, এই এলাকায় কোনো যানজট নেই। তবে আফতার নগরে পশুর হাট থাকায় রামপুরা ও বাড্ডা এলাকায় যানজট রয়েছে। এ ব্যাপারে ডিএমপির উত্তর ট্রাফিক বিভাগের ডিসি প্রবীর কুমার রায় বলেন, যাত্রী ও যানবাহন চালকদের সহযোগিতা ছাড়া ট্রাফিক পুলিশের একার পক্ষে রাস্তার ডিসিপ্লিন রক্ষা ও যানজট নিরসন সম্ভব না। যানজট নিরসনে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগগিরই যানচলাচল স্বাভাবিক হবে। এসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার না হয়ে বরং ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে সাধারণ যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।জেইউ/এসকেডি/একে/পিআর
Advertisement