কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই- মান্না দে'র গাওয়া এই বিখ্যাত গান আজও বাঙালির মনে গেঁথে আছে। তবে দুঃখের বিষয়, যে কফি হাউস নিয়ে মান্না দে এই গানটি গেয়েছিলেন, সেই কফি হাউসে নাকি বাংলায় কথা বলা যাবে না!
Advertisement
গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক তরুণীর এমন পোস্ট নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস থেকে বলে দেয়া হয়েছে, সেখানে বাংলায় কথা বলা যাবে না। এখন থেকে শুধু হিন্দি বলতে হবে। এ ঘটনায় কফি হাউসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন কিছু মানুষ। তাতে যোগ দেয় বাংলা ভাষার প্রচার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনও।
ফেসবুকে পোস্ট করা ওই তরুণীর নাম ইন্দ্রানী চক্রবর্তী। গত ২৩ অক্টোবর বিকেলে তারা তিন বন্ধু মিলে কফি হাউসে গিয়েছিলেন। সেখানে মোবাইল ফোনে চার্জ দেয়া নিয়ে কফি হাউসের এক কর্মীর সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।
Advertisement
ইন্দ্রানী বলেন, ‘সপ্তাহে অন্তত একদিন আমরা কফি হাউসে যাই। আগেও বহুবার মোবাইলে চার্জ দিয়েছি, সমস্যা হয়নি। কিন্তু বুধবার চার্জ দেয়া যাবে না বলে আমাদের জানানো হয়। জানতে চেয়েছিলাম- কেন যাবে না। বলা হয়, মালিকের সঙ্গে কথা বলুন। অথচ আমরা জানি, কফি হাউসের মালিক বলে কেউ নেই। একটি সমবায় এই কফি হাউস চালায়।’
ওই তরুণীর দাবি, কথিত মালিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলে দেন, হিন্দিতে কথা বলতে হবে। কারণ, তিনি বাংলা বোঝেন না। ফের হিন্দিতে চার্জ দেয়ার অনুরোধ জানালে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘হামনে এক বার বোল দিয়া, নেহি হোগা। আব নিকলো রুমসে। ইস রুমমে বাংলা নেহি চলেগা।’
মান্না দের প্রসঙ্গ তুলে ইন্দ্রানী ও তার বন্ধুরা বলেন, ‘তার গান শুনেই নতুন প্রজন্ম কফি হাউস চিনেছে। তিনিও তো বাঙালিই! ওই মালিক বলেন, মান্না দে কৌন হ্যায়? যে লোকটা আমাদের ওই মালিকের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি উত্তরে বলেন, জানি না। অত বকব না। এখানে বাংলা বলা যাবে না, বেরিয়ে বাংলা বলুন।’
স্থানীয় অধিকার কর্মী দীপাঞ্জন অনন্যা বসু বলেন, ‘কফি হাউস বাঙালির চেতনায় একটা বিশেষ জায়গা নিয়ে রয়েছে। সেখানে বাংলায় কথা বলতে কেউ নিষেধ করছেন, এটা ভাবাই যায় না।’
Advertisement
কফি হাউস পরিচালনা সমিতির সম্পাদক তপন পাহাড়ি বলেন, ‘আমাদের কোনো কর্মী এমন বলতে পারেন বলে বিশ্বাস হচ্ছে না। তবু যদি বলেও থাকেন, যে তরুণীকে বলা হয়েছে তিনি কফি হাউসের পরিচালন সমিতিতে অভিযোগ জানাতে পারতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার বদলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এভাবে পোস্ট করায় তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ওই তরুণীর বিরুদ্ধে আমরা আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করেছি।’
ইন্দ্রানীর দাবি, যে ব্যবহার করা হয়েছে সেটাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানানো হয়েছে। এটাই তাদের প্রতিবাদ।
এমএসএইচ