দেশজুড়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ। এ সময়ে ভর্তিচ্ছুরা ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে, আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যস্ত সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে। ভর্তি পরীক্ষার এই সময়টুকু যেন ভর্তি জালিয়াতি চক্রগুলোর জন্য ভরা মৌসুম।
Advertisement
২৭ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শুরু হতে যাওয়া ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় জালিয়াতি চক্র। প্রক্সির মাধ্যমে কিংবা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে নিত্য নতুন কৌশলে অবৈধ পন্থায় ভর্তির সুযোগ তৈরি করে এ চক্রটি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে এ চক্রের রয়েছে শক্তিশালী চারটি সিন্ডিকেট। গত তিন বছরে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে এই সিন্ডিকেটগুলোর সদস্য ও চুক্তিবদ্ধ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক আটক হয়েছেন। কিন্তু তারপরও কমেনি এদের দৌরাত্ম্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ফের পুরোনো রূপে ফিরেছে এই সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে পুরোনো এই জালিয়াতি চক্রের সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিগত কমিটির তিন প্রভাবশালী নেতা ও দুই ছাত্রলীগ কর্মীর নেতৃত্বে চারটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তবে নেতৃত্বে থাকলেও সবসময় তারা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা অনেকটা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। এদের পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় আটক ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা শাস্তি পেয়েছেন তারাও তৎপর।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র পুরোনো সিন্ডিকেটগুলো ফের সক্রিয় হচ্ছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাসহ অন্তত ১০ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে।
Advertisement
তবে এসবের মধ্যেও থেমে নেই ভর্তি জালিয়াতি চক্রের তৎপরতা। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থীকে প্রক্সির মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। অপরদিকে চুক্তিবদ্ধ ভর্তিচ্ছুদের বাতলে দেয়া হচ্ছে নানা কৌশল। জালিয়াতি চক্রের সদস্য ও চুক্তিবদ্ধ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ কক্সবাজার জেলার অধিবাসী। এছাড়াও রয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীও।
বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় জালিয়াতির ঘটনায় আটক শিক্ষার্থীদের তালিকা থেকে জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আটক হওয়া প্রায় অর্ধেকের বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন প্রক্টর অফিসের সামনে থেকে ইতিহাস বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেনকে আটক করা হয়। ভর্তি জালিয়াতের হোতা আনোয়ারের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বিন্দাপাড়ার এলাকায়। তার বিরুদ্ধে প্রক্সি দিয়ে দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি ও টাকার বিনিময়ে চাকরি প্রদানের মত জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
এর আগে ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর বি-১ ইউনিটের পরীক্ষায় আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসেন সেসময় লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, প্রক্সি দেয়ার জন্য আনোয়ার ও তার মধ্যে দুই লাখ টাকার চুক্তি হয়। শুধু তাই নয়, আটক হওয়া জালিয়াতি চক্রের এসব সদস্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদধারী নেতা থেকে শুরু করে কর্মীও ছিল। যারা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার হয়েছিলেন। এদিকে যেকোনো ধরনের ভর্তি জালিয়াতি রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে জানিয়ে সহকারী প্রক্টর রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, প্রক্সি রোধে আমাদের রয়েছে দেশের একমাত্র এন্টিপ্রক্সি এপস’র মাধ্যমে সহজেই ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত করা যাবে। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন চবির আইসিটি সেলের অধীনে একটি এন্টিপ্রক্সি টিম মাঠে কাজ করবে। একই সঙ্গে জালিয়াতি রোধে পূর্বের অভিযুক্তদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাই নিরাপত্তা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
আরএআর/এমএস
Advertisement