আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দুই শিফটে ভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
Advertisement
এবার চারটি ইউনিট ও দুটি উপ-ইউনিটে মোট চার হাজার ৯২৬টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৭০ জন ভর্তিচ্ছু। আসন্ন ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক মিছিল মিটিং বন্ধে দেয়া হয়েছে নির্দেশনা।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৭ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য
ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ, র্যাব, ডিবি, ডিএসবিসহ ৭ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জালিয়াতি ঠেকাতে ডিজিএফআই, এনএসআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি মাঠে থাকবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর ১২০ জন সদস্যও নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন যেকোনো ধরনের সংঘটিত অপরাধ দমনে পরিচালিত হবে মোবাইল কোর্ট। পাশাপাশি র্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় থাকবেন।
Advertisement
যা কিছু নিষিদ্ধ
ক্যাম্পাসে সব ধরনের পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট, চিকা মারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এসব অপসারণের কাজও চলছে। এবার কোনো ছাত্র সংগঠন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মিছিল করবে না। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে ভর্তি পরীক্ষার সময় যেকোনো ধরনের মিছিল, সভা, সমাবেশ ও মানববন্ধনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে নিষিদ্ধ থাকবে মোবাইল, স্মার্ট ঘড়িসহ যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস। এছাড়া ক্যাম্পাসে সব ধরনের নোট, শিট, সাজেশন বিক্রয় ও মডেল টেস্ট নেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী।
ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের জন্য যেসব ব্যবস্থা
Advertisement
ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও ভর্তিচ্ছুদের আবাসিক হলগুলোতে থাকার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছুদের আবাসিক হলে প্রবেশের সময় প্রবেশপত্রের কপি জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এছাড়া ভর্তিচ্ছুদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক হলগুলোতে প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের পরিদর্শন করতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্দেশনা দিয়েছে।
এদিকে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছাত্রী ও নারী অভিভাবকদের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেখ হাসিনা হলে বিশ্রাম ও ওয়াশরুম ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল হোটেল ও খাবারের দোকানে নির্ধারিত মূল তালিকা সাটানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে বাড়তি মূল্য আদায় করতে না পারে।
যে সূচিতে চলবে শাটল ট্রেন
এবার ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন শাটল ট্রেন (২৭ ,২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর) দিনে ৯ বার করে মোট ১৮ বার বিশ্ববিদ্যালয় রুটে চলাচল করবে এবং এক ডেমু ট্রেন দিনে দুই বার করে মোট ৪ বার যাতায়াত করবে।
বটতলী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন
নগরীর বটতলী স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অভিমুখে সকাল ৬টায়, সকাল সাড়ে ৬টা, সকাল ৮টা ১৫ মিনিট, সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট, সকাল ৯টা ১৫ মিনিট (ডেমু ট্রেন), বেলা ১১টা ৪০ মিনিট, দুপুর ১২টা, দুপুর ১টা ৫০ মিনিট, বিকেল ৩টা, বিকেল ৪টা ও রাত সাড়ে ৯টায় শাটল ট্রেন ছেড়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে বটতলী স্টেশন
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শহর অভিমুখে সকাল ৭টা ৫ মিনিট, ৭টা ৩৫ মিনিট, সকাল ৯টা ২০ মিনিট, সকাল ১০টা, সকাল ১০টা ৩০ মিনিট (ডেমু ট্রেন), দুপুর ১টায়, দুপুর ১টা ৩০ মিনিট, বিকেল ৩টায় (ডেমু ট্রেন), বিকেল ৫টায়, বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট এবং রাত ৯টা ১০ মিনিটে শাটল ট্রেন ছেড়ে যাবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে যেসব পোস্টার ও চিকা মারা হয়েছে সেগুলো অপসারণের কাজও চলছে। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রসংগঠনগুলোর মিছিল-মিটিংয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে পারবে তারা।
ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এসএম আকবর হোছাইন বলেন, প্রশ্ন ফাঁসসহ ভর্তি পরীক্ষা-সংক্রান্ত সকল অভিযোগ কেন্দ্রে প্রবেশের এক ঘণ্টা পূর্বে লিখিতভাবে ইউনিট কো-অর্ডিনেটরকে জানাতে হবে। নেকাব ও বোরকা পরিহিত ছাত্রীরা মুখমণ্ডল ও কান প্রদর্শন করতে হবে। পরীক্ষার্থীদের শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে অ্যান্টি প্রক্সি অ্যাপস ব্যবহার করবেন দায়িত্বরতরা। পরীক্ষার দিন সকাল ৮টায় হল প্রভোস্টরা প্রত্যেকটি হল পরিদর্শন করবেন। ভর্তি পরীক্ষার ৪৮ ঘণ্টা আগে আসন বিন্যাস ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িতকরণের বাধ্যবাধকতা নেই।
প্রসঙ্গত, ১ম বর্ষের (স্নাতক সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা- ‘বি’ ইউনিট ২৭ অক্টোবর, ‘ডি’ ইউনিট ২৮ অক্টোবর, ‘এ’ ইউনিট ২৯ অক্টোবর, ‘সি’ ইউনিট ৩০ অক্টোবর এবং ‘বি ১’ ও ‘ডি ১’ উপ-ইউনিট এর ভর্তি পরীক্ষা ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।
আবদুল্লাহ রাকীব/এমএএস/পিআর