জাতীয়

বাংলাদেশের ২ কোটি শিশু জলবায়ু ঝুঁকিতে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের এক কোটি নব্বই লাখেরও বেশি শিশু সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব শিশুদের এক-চতুর্থাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম।

Advertisement

বন্যা ও নদী ভাঙনের মতো সমস্যার কারণে অনেক পরিবারকে শহরের বস্তিতে গিয়ে গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে বসবাস করতে হচ্ছে। সেখানে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার, শিক্ষা, পর্যাপ্ত স্বাস্থসেবা, স্যানিটেশন এবং নিরাপদ খাবার পানির সংকটে থাকে তারা। এসব বস্তিতে বসবাকারী শিশুরা অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে, সহিংসতা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের শিকার হতে হয় শিশুদের।

সম্প্রতি ইউনিসেফের ‘দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড চিলড্রেন ২০১৯, চিলড্রেন, ফুড অ্যান্ড নিউট্রেশন, গ্রোয়িং ওয়েল ইন এ চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কৃষির ওপর জীবিকা নির্বাহ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা ও বন্যায় দেশটির কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার মানে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের না খেয়ে থাকার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়ে যায় এবং দরিদ্র পরিবারগুলোর ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

Advertisement

এতে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে শিশুপুষ্টির জন্যেও হুমকি। ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় ৫ বছরের নিচের বয়সী ৫ কোটি ৮৭ লাখ শিশুর বর্ধন হয়নি। আর বিকশিত হয়নি প্রায় ২ কোটি ৫৯ লাখ শিশু। শিশু ও তরুণরা বেঁচে থাকছে ঠিকই, কিন্তু তাদের মধ্যে খুব সামান্যই বিকাশ বা বৃদ্ধি ঘটছে।

ইউনিসেফ বলছে, পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতি, অপরিকল্পিত নগরায়নসহ নানাবিধ কারণে শিশুসহ তাদের পরিবারের মধ্যে হেপাটাইটিস এ, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া জ্বরসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

মেঘনা নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার পর স্বামী আলী আকবর, মেয়ে সানজিদা (৩) এবং ছেলে শাহানকে নিয়ে (৯) ঢাকার মিরপুরের চলন্তিকা বস্তিতে আসেন রুমানা। তিনি বলেন, ‘যদিও এখানে জীবন ধারণের ব্যয় নির্বাহ করতে আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, তারপরও একটু শুকনা মাটিতে পা রাখতে পারছি।’

তিনি আর বলেন, ‘এখানে আমার স্বামী মাসে প্রায় সাত হাজার টাকা আয় করেন। এ দিয়ে আমরা বাসা ভাড়া দিই এবং নিত্যপণ্য কিনি। এরপর টাকা আর তেমন হাতে থাকে না। কিন্তু এখানে আমরা উপার্জন করতে পারছি, যা আমরা আমাদের গ্রামে থেকে করতে পারতাম না।’

Advertisement

পানির ওপর বাঁশের খুটি ও কাঠ দিয়ে বানানো একটি ছোট রান্নাঘর আরও ১০টি পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয় রুমানাকে।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিদিনই মসুর ডাল দিয়ে ভাত খাই। খুব কম সময় মাছ-মাংস খেতে পারি। আমার ছেলে শাহান অপুষ্টিতে ভুগছে।’

নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যকর টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই চলন্তিকা বস্তিতে। এখানে ঠিকমত বিদ্যুৎও থাকে না। ইঁদুর আর পোকামাকড়ের যন্ত্রণায় জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে জানিয়ে খেদ প্রকাশ করেন রুমানা।

এ বছর জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং অ্যাকশন প্ল্যানের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ওই পরিকল্পনায় দরিদ্রতম এবং সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকাদের চাহিদার ভিত্তিতে ক্ষেত্রগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হবে। এছাড়া শিশুপুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশনের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিতের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

এমএসএইচ/জেআইএম